কর্মবিরতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে বিভাজন

কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে এবার বিভক্ত আইনজীবীরা৷হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি করে আন্দোলনের কথা শুক্রবার ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃণমূলের লিগ্যাল সেল তার বিরোধিতা করেছে৷

বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এ দিন জানান হয়, আগামীকাল সোম থেকে শুক্রবার লাগাতার ৫ দিনের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে৷তাই এই একসপ্তাহ এজলাসে না-যাওয়ার ডাক দেয় তারা৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃণমূল লিগ্যাল সেল জানিয়ে দেয়, তারা এই সিদ্ধান্ত মানছে না৷তাই তারা নিজেদের সেলের সদস্যদের আগামী সপ্তাহে আদালতে আসার আহ্বান জানিয়েছে৷ বারের সদস্যরাও অনেকেই তৃণমূল লিগ্যাল সেলের সদস্য৷এখন এই ইস্যুতে আইনজীবীরা কী করেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে৷

স্মরণকালের মধ্যে হাইকোর্টে এত দীর্ঘ সময় ধরে কর্মবিরতির নজির নেই৷সিদ্ধান্ত না-বদলালে হাজার হাজার মামলাকারী বিপাকে পড়বেন, সন্দেহ নেই৷ হাইকোর্টে কাজ না-হওয়া নতুন কোনও ব্যাপার নয়৷মাঝেমধ্যেই আইনজীবীর মৃত্যুতে আইনজীবীরা কাজ না-করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন৷এ নিয়ে বিচারপতিদের সঙ্গে আইনজীবীদের সংঘাতও হয়েছে৷কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির অভাব নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন আইনজীবীরা৷বিচারপতিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শূন্যপদ নিয়ে৷ এমনকী বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ একটি মামলার সূত্রে বিচারপতি নিয়োগ না-হওয়ায় কাজকর্ম চালানো প্রবল সমস্যার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন৷ যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে সে সময়ে৷ এক সময়ে এক বিচারপতি এখানে বিচারপতি নিয়োগ না-করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট-কেন্দ্র বিরোধের অভিযোগও তোলেন৷ পরবর্তীতে আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সবার কাছে দরবার করে চিঠি দেন৷ কিন্তু এত দিনেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি৷

এ দিন বার আস্যোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম মজুমদার বলেন, ‘বারের বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৯ থেকে ২৩ ফেব্র‌ুয়ারি কর্মবিরতি করা হবে৷’ এর আগে বিচারপতি দ্রুত নিয়োগের দাবিতে সব পক্ষকে চিঠি দিয়েছিল বার৷ একমাসের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তার পরেও কোনও কাজ না-হওয়ায় আন্দোলনের ধার বাড়াতে এ দিন এক সপ্তাহের কর্মবিরতির ডাক দেয় বার আস্যোসিয়েশন৷ হাইকোর্টে বিচারপতির ৭২টি পদের মধ্যে বর্তমানে রয়েছেন ২৯ জন৷ তার মধ্যে দু’জন বিচারপতি আন্দামান সার্কিট বেঞ্চের দায়িত্ব সামলাতে চলে যান৷ ফলে ২৭ জনকে কাজ চালাতে হচ্ছে৷ মামলার পর মামলা জমে থাকছে৷ এই অবস্থায় বার কর্মবিরতির ডাক দিলেও, তৃণমূল বেঁকে বসায় বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ তৃণমূল লিগ্যাল সেলের চেয়ারম্যান পন্ট‌ু দেবরায় বলেছেন, ‘আমরা এই কর্মবিরতির বিরুদ্ধে৷ সোমবার তাই আইনজীবীদের হাইকোর্টে আসতে আহ্বান করা হচ্ছে৷’

বিচারপতির অভাবের কথা স্বীকার করলেও, তৃণমূল কেন কর্মবিরতির ইস্যুতে বেঁকে বসেছে, তা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে৷ আইনজীবীদের একাংশের যুক্তি, বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে এ বার তৃণমূলের প্যানেলের প্রায় ভরাডুবি হয়েছে৷প্রধান দু’টি পদ, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন কংগ্রেস প্রভাবিত প্যানেলের প্রার্থীরা৷এর আগেও ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবিত প্যানেল থেকে জয় পাওয়া প্রথম সারির পদাধিকারীরা পরে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন৷ কিন্তু এ বারে তার ব্যতিক্রম৷ সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, কেউই শাসকদলের ছাতার তলায় যেতে নারাজ বুঝেই বার অ্যাসোসিয়েশনের নেওয়া কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা৷ আগামী সপ্তাহে আইনজীবীদের নিজেদের মতের পক্ষে সামিল করতে এখন প্রচার চালাচ্ছে দু’পক্ষই৷সূত্র: এইসময়