ছবি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সৌজন্যে

ইরাকে এক নারীর মৃত্যুদণ্ড, ১১ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

জঙ্গি সংগঠন আইএসকে সহযোগিতার দায়ে এক তুর্কি নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরাকের একটি আদালত। সে সময় আরও ১১ বিদেশি বিধবা নারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই ১২ নারীর মধ্যে ১১ জন তুর্কি ও একজন আজেরি। তবে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দাবি করে আসছেন, তাদের স্বামীরা প্রতারণা বা জোর করে তাদের আইএসে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। তাদের বেশিরভাগের কোলেই নাবালক শিশু রয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইরাকের মসুল ও তাল আফার থেকে গ্রেফতার হওয়া এসব নারীর সবারই বয়স ২০ থেকে ৫০ এর মধ্যে। তাদের সবার স্বামী গত বছর ইরাকি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে।

দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে একজনের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি স্বামী ও সন্তানসহ স্বেচ্ছায় ইরাকে এসে আইএসে যোগ দিয়েছেন। বিচার চলাকালে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী চিহ্নিত আসামি হওয়ায় আমাদের তুরস্ক ছাড়তে হয়েছে। আমি একটি ইসলামী রাষ্ট্রে থাকতে চেয়েছিলাম যেখানে শরীয়াহ আইন চালূ আছে। কিন্তু আমি এখানে আসার কারণে দুঃখপ্রকাশ করছি।’ ৪৮ বছর বয়সী এই নারীর স্বামী ও দুই সন্তান এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এসব নারীর সবাইকে প্রতারণার মাধ্যমে ইরাকে আনা হয়েছে। তারপরও তারা কোনও ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত হয়নি। কিন্তু ইরাকি আইন অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসীদের সহযোগিতার অপরাধে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আজেরি নারী বলেন, ‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে তুরস্কে দেখা করতে বলেন। কিন্তু সেখান থেকে একজন দালাল আমাকে বলেন তিনি আমার ভবিষ্যত স্বামীর কাছে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা তিনি জানতেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমি তুরস্কেই আছি। কিন্তু আমি নিজেকে সিরিয়ায় আবিস্কার করি। পরে আমার স্বামী আমাকে ইরাকে নিয়ে আসে।’ এভাবে অন্য নারীরাও তাদের সঙ্গে হওয়া প্রতারণার কথা আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, তিন বিচারকের একটি প্যানেল এসব নারীদের কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই রায় দেন। তারা আপিল করার জন্য আরও একমাস সময় পাবেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইরাকে ৮১৩ শিশুসহ ৫০৯ বিদেশি নারী বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জনই তুর্কি নাগরিক।

গতকাল রোববার রায় হওয়া নারীদের সঙ্গে ১৭ বছর বয়সী এক জার্মান কিশোরীকেও ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে তিনি জার্মানি থেকে তুরস্ক ও সিরিয়া হয়ে ইরাক পৌঁছেন। সেখানে তিনি চেচনিয়ার এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন।

তবে আইএসে যোগ দেওয়ায় তিনি দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। আমি যুদ্ধ থেকে মুক্তি চাই। অস্ত্র ও সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি জানি না, কিভাবে এমন জঘন্য চিন্তা করেছিলাম। আমি আমার জীবনটা পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছি।’