ড. বদরুল হাসান কচি

শিক্ষার্থীদের বলছি, আন্দোলন আর উসকানির ফারাকটা বুঝুন

ড. বদরুল হাসান কচি

সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীর ‘রগ কাটা’ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে তিন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়নি। অভিভাবকরা ওই ছাত্রীদের বুঝানোর জন্য হল থেকে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক দাবী করেন- কোনো অপরাধ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে, কিন্তু ছাত্রীদের এভাবে বের করে কর্তৃপক্ষ ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। অভিভাবক ডেকে রাতের অন্ধকারে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

ব্যাপারটি এমন নয় যে, মধ্যরাতে ঐ শিক্ষার্থীদের একা রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এবং সকলে নিরাপদে যার যার বাসায় পৌঁছেছে। এখানে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে রাত ১১/১২টা বাজে কেন তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য গণমাধ্যমে সে জবাবও দিয়েছেন- অভিভাবকদের সন্ধ্যার পরই জানানো হয়েছিল, দূর-দূরান্ত এবং কর্ম ব্যস্ততার মাঝে আসতে অভিভাবকরাই দেরী করেছেন।

তাছাড়া হলের প্রাধ্যক্ষর বক্তব্য থেকে জানা যায়, বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে ডেকে এনে তাদের মোবাইল চেক করা হয় এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ ফেইসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে খুজব ছড়াচ্ছে। এখানে দ্বিমতের সুযোগ নাই, যদি হল প্রশাসন মনে করেন, অতীতে গুজব ছড়ানোর শাস্তি হিসেবে কিংবা সামনে অন্য কোন অনাকাংখিত ঘটনা দূর করার জন্য এমন একটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তাহলে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। কারণ হলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আইনগত অধিকার হল প্রশাসনের রয়েছে এবং তারা অভিভাবকসুলভ আচরনই করেছে। অথচ সাধারণ এ বিষয়কে ভিন্নভাবে রং দেয়ার চেষ্টা করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ঘটনার পরের দিন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বক্তারা ঐ শিক্ষার্থীদের পুনরায় হলে ফিরিয়ে আনার দাবী জানান। নতুবা রাজপথে আবারও দাবানল জ্বালানোর হুমকি দেন। এখানে কিছু কথা বলতেই হচ্ছে- হল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে ঐ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়নি; অভিভাবকের কাছে তুলে দিয়েছে যাতে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা শুধরাতে যেন শিক্ষার্থীদের বুঝানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার বক্তব্যও খুব স্পষ্ট- ‘আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঐতিহ্যপূর্ণ। এটা খুব স্বাভাবিক। যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করতে পারে যে কেউ। তবে উসকানি দেওয়া আর আন্দোলন এক নয়। আমরা আন্দোলনকে সমর্থন করি, উসকানিকে নয়। ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে এটি করা হয়েছে।’

ঢাবি উপাচার্যের সাথে একই সুরে আমরা সাধারণ জনগণও বলতে চাই- আমরা আন্দোলনকে সমর্থন করি; কারণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যৌক্তিক উপায় খুঁজে একটি সমাধান বেরিয়ে আসে। কিন্তু আন্দোলনকে সামনে রেখে কোন অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উসকানি কিংবা গুজব ছড়িয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা অপরাধ।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সে মোতাবেক কাজও শুরু হয়েছে বলে মন্ত্রী পরিষদ সচিব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অথচ সেখানে বারবার নানান ইস্যু খুঁজে রাজপথে দাবানল জ্বালানোর হুমকি দেয়া বরং আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

লেখক: আইনজীবী এবং সদস্য, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।