বন্দুকযুদ্ধ

মাদকবিরোধী অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১০

মাদকবিরোধী অভিযানে ঢাকাসহ সারা দেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দশজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে একজন, কুমিল্লায় দুজন, পিরোজপুরে দুজন, সাতক্ষীরায় দুজন, চাদঁপুরের ফরিদগঞ্জে একজন, ঝিনাইদহে একজন ও নটোরে একজন নিহত হয়েছেন।

গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

মিরপুর
রাজধানীর মিরপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত পরিচয়ে (৫০) এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, নিহত ওই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী।

রূপনগর থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর জানান, রূপনগরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে-এমন খবর পেয়ে ডিবি (পশ্চিম) বিভাগের একটি দল গতকাল দিবাগত রাত ৩টার দিকে সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায়। ডিবিও পাল্টা গুলি চালালে একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থলে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৪টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাশ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এসআই।

কুমিল্লা
কুমিল্লায় পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এনামুল হক (দোলন) ভূইয়া (৩৫) এবং নুরু নামের (৫৫) দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত দুজন মাদক ব্যবসায়ী। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার পশ্চিম ভিংলাবাড়ি এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে।

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, গোপন সংবাদে মাদক উদ্ধার করতে পুলিশের একটি দল উপজেলার পশ্চিম ভিংলাবাড়ি এলাকায় গোমতী বাঁধে অবস্থান নেয়। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী দোলনসহ তার সহযোগীরা পৌঁছলে তাদের আটকের চেষ্টা করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী দোলনসহ তার ওপর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় ২৩ রাউন্ড শাটগানের গুলি চালায়। এতে দোলন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ১০ কেজি গাঁজা ও ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। নিহত দোলনের বিরুদ্ধে দেবিদ্বার ও মুরাদনগর থানায় ১২টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

এদিকে সদর দক্ষিণ থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, মাদক বিরোধী অভিযানকালে উপজেলার সীমান্তবর্তী গলিয়ারা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী নুরু ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও গুলি চালালে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয় নুরু। তাকে গুরুতর আবস্থায় উদ্ধারের পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক নুরুকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি রিভলবার ও পাঁচ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। নিহত নুরু স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে ১১টি মাদক ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

পিরোজপুর
পিরোজপুরে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওহিদুজ্জামান (৩৫) ও মিজানুর রহমান (৩৪) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের টোনা ব্রিজ সংলগ্ন কৈবর্তখালী গ্রামে ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ি এলাকায় এই দুই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

পিরোজপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ জানান, রোববার দুপুরে পিরোজপুর পৌরসভার উত্তর কৃষ্ণ নগর এলাকা থেকে ওহিদুজ্জামানকে পিরোজপুর ডিবি পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাত পৌনে ১টার দিকে কৈবর্তখালী গ্রামে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে ওহিদুজ্জামানের সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মাদক ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামান পালাতে গেলে গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫ রাউন্ড গুলি, দুটি বগি দা, ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫০ গ্রাম গাঁজা, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের বিরুদ্ধে মাদক, সন্ত্রাসী, অস্ত্র মামলাসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ সুপার।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, রোববার দিবাগত রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ি এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ডাকাতেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।

পরে ঘটনাস্থল থেকে দেড় কেজি গাঁজা, ৫৫ পিচ ইয়াবা বড়ি ও চারটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মাদকের ছয়টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার বাঁকালে অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা মাদক ব্যবসায়ী। আজ সোমবার ভোরে সাতক্ষীরা ভোমরা সড়কের বাঁকালের আগুনপুর গ্রামে রাস্তার পাশ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সদর থানার উপপরিদর্শক প্রবীর কুমার দাস জানান, ভোরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুটির দেহে একটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি ও গেঞ্জি। মাত্র ১০ গজের ব্যবধানে পড়ে থাকা লাশ দুটির পরিচয় জানাতে পারেনি কেউ। তাদের লাশের পাশে একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল ও একটি মদের খালি বোতল পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির এক পর্যায়ে দুজন নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুর
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পিচ্চি হান্নানের সহযোগী ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা (৪৫) নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নে বৈচাতরী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ্ আলম জানান, রাত ১০টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে লাল বাদশাকে তার বাড়ির সামনে থেকে মাদক বিক্রির সময় ১১১ পিছ ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল অভিযানে বের হয়। গুপ্টি ইউনিয়নের চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধেরর বৈচাতরী এলাকায় গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাঈদ ওরফে লাল বাদশা। আহত অবস্থায় তাকে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদশাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহতের কাছ থেকে ১১১ পিছ ইয়াবা এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি একনলা বন্দুক, ৩টি ককটেল, ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় সাতটি, চাঁদপুর সদরে দুটি, চট্টগ্রামে একটিসহ ১০টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টা দিকে সদর উপজেলার জাড়গ্রামে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। তবে নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানায়, রাত ১টার দিকে জাড়গ্রামে গুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছে একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, প্রায় এক কেজি গাঁজা, ২০ বোতল ফেনসিডিল ও ছয় জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়।

মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে নিহতের এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ওসি।

নাটোর
নাটোরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে খালেক উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের দাবি, নিহত খালেক উদ্দিন মাদক ব্যবসায়ী। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে সিংড়া উপজেলার ভাগনগর কান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যাব-০৫ এর সিপিসি -২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা জানান, গতকাল রাতে সিংড়া আত্রাই আঞ্চলিক সড়কে টহলে থাকা র‌্যাবের একটি দল ভাগনগর কান্দি এলাকায় মাদকের একটি আস্তানায় অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে। উভয় পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী খালেক উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি ও বেশ কিছু মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের ওই কমান্ডার।