রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করতে এবং সার্ক, বিমসটেক, আসিয়ান রাষ্ট্র সমূহে শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে স্থানান্তরের দাবীতে আইনি নোটিশ

জাতিসংঘ চুক্তিতে নাগরিকত্বের প্রশ্ন অমীমাংসিত, হতাশ রোহিঙ্গারা

রাখাইনে খুন, ধষর্ণ আর অগ্নিসংযোগের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরাতে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মিয়ানমার। এই চুক্তিতে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করা রোহিঙ্গারা। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি রোহিঙ্গাদের এই হতাশার খবর সামনে এনেছে। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জটিল আলোচনার ক্ষেত্রে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রথম পদক্ষেপ।

১৯৮০’র দশকে তৎকালীন মিয়ানমারের সেনা শাসিত জান্তা সরকার এক আইনের বলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে চিহ্নিত করে চালানো হয় কাঠামোবদ্ধ সেনা প্রচারণা। ধাপে ধাপে সেখানকার মানুষদের রোহিঙ্গা বিদ্বেষী মনোভাব গড়ে তোলা হয়। সর্বশেষ গত বছর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে সহিংসতা জোরালো করলে বাংলাদেশ পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপে এসব রোহিঙ্গাদের ফেরাতে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত বুধবার (৬ জুন) জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।

তবে ওই চুক্তিতে নাগরিকত্বের প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়ায় বহু বছর ধরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মিথ্যা আশ্বাস পেয়ে আসা রোহিঙ্গারা হতাশ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা তৈয়ব আলী নামে রোহিঙ্গা এপিকে বলেছেন, প্রথমে রাখাইনে থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে পারে ইয়াঙ্গুন সরকার। কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে তিনি বলেন, ‘যখন আমরা দেখে শুনে নিশ্চিত হবো যে তারা নাগরিক অধিকার উপভোগ করছে তখন আমরা ফিরে যাবো।’

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, শরণার্থী শিবিরের অনেকেই বলেছেন তারা সত্যিকার অর্থে কোনও চুক্তিতেই খুশি হতে পারছেন না যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও কেড়ে নেওয়া ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ সায়িদ নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, যখন সারা বিশ্ব এটা দেখবে, যখন আমরা এটা দেখবো তখন আমরা ফিরে যাবো।

তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জটিল আলোচনার ক্ষেত্রে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রথম পদক্ষেপ। তারা বলছেন বুধবার নেপিদোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি ‘সহযোগিতার রুপরেখা’ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও কার্যকর প্রত্যাবসানের শর্ত তৈরি করা হবে। তবে এই চুক্তিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

গত বছর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের তরফে প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হলেও মিয়ানমার এক হাজার জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেয়। ফিরিয়ে আনা রোহিঙ্গাদের জন্য কাঁটাতার ঘেরা অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ওই শিবির থেকে ধাপে ধাপে তাদের নিজেদের গ্রামে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে সেই প্রত্যাবাসনও শুরু হয়নি।

মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গতি আসবে। তবে মানবাধিকার গ্রুপগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত অভিযোগকে বহুদিন আমলে নেয়নি মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইট ইমেজ আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে রাখাইনে হত্যা-ধর্ষণ-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত তুলে আনলেও মিয়ানমার ওই অভিযোগকে ‘অতিকথন’ কিংবা ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, রাখাইনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ রাখে তারা।

জাতিসংঘ কর্মকতারা বলছেন, বুধবারের চুক্তির পর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা রাখাইনে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতির সম্পর্কে আরও ভালোভাবে মূল্যায়ন করে শরণার্থীদের তাদের গ্রামের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো যাবে।