স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

কারাগারে ৪৩ হাজার বন্দি মাদক মামলার আসামি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশের কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৩৭ হাজার। কিন্তু এ সংখ্যা এরইমধ্যে ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ৪৩ হাজার বন্দির বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দেশে মাদক কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা এ সংখ্যায় অনুমেয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

পুলিশের বিশেষায়িত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) নির্মিত মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোববার (২২ জুলাই) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে চাহিদা, যোগান ও মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এ তিন জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলের মতো আমরা মাদককেও নির্মূল করবো।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর একসময় ছিলো ঠুঁটো জগন্নাথ। সেখান থেকে আমূল পরিবর্তন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। মাদকবিরোধী এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।

তিনি আরো বলেন, যেখানেই অবৈধ ব্যবসা সেখানেই অবৈধ অর্থ, অবৈধ অস্ত্র। মাদক ব্যবসায়ীদের যারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করছেন তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হচ্ছে কিংবা নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা সাড়া দেয়নি সেইসব অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করতে গেলে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করছে। কোন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীতো সেই পরিস্থিতিতে বসে থাকবে না, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আমরা কাউকে মারছি না। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত মাদক নির্মূলে সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সীমান্ত এলাকার ফেনসিডিল কারখানাগুলো গুড়িয়ে দিচ্ছে। এ দেশের নেশাখোররা ফেনসিডিলের কথা ভুলেই গেছে। এখন দেশজুড়ে ইয়াবার আগ্রাসন চলছে।

পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক যুদ্ধেই নামতে হয়েছে। এক সময় কলম্বিয়ায় মাদকের আধিপত্য বেশি ছিল। সেই কলম্বিয়ায় এখন মাদক নেই। আমরাও সেই জায়গাতে যাচ্ছি।

মাদক নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে কেউই প্রকাশ্যে ধূমপান করে না বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শুধু অভিযান নয়, মাদকবিরোধী প্রচারণা আরো বেশি দরকার। মাদককে শুধুমাত্র পুলিশি সমস্যা ধরে নিলে চলবে না। এটা সামাজিক সমস্যা। তাই সামাজিকভাবেই একে মোকাবেলা করতে হবে। মাদকবিরোধী ভূমিকায় সব শ্রেনী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হতে হবে।

একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য একজন মাদকসেবীই যথেষ্ট। অনেক বাবা মা দুঃখ প্রকাশ করেন, বলেন, আমার ছেলেকে জেলে দিন, যেন ৫/৬ বছর জেল থেকে বের হতে না পারে।

২৬ জেলাতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬৪ জেলার সরকারি হাসপাতালে যদি ১০টি করে বেড সংরক্ষিত রেখে মাদকসেবীদের চিকিৎসা দেওয়া যায় তবে কার্যকরী ফলাফল আসবে। সার্বিকভাবে প্রচেষ্টা সফল করতে হলে সবার ঐকান্তিক সমর্থন ও ভূমিকা পালন জরুরি।