‘সান্ধ্য কোর্স’ বন্ধ না করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা, জানতে চান হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

রাজনৈতিক রেষারেষিতে আদালতকে না টানার আহ্বান হাইকোর্টের

পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) রেষারেষিতে আদালতকে না টানতে রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে গত বুধবার (৩ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আহ্বান জানান।

মামলার শুনানির একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি কথাবার্তা হয়। এ সময় আদালত তাদের শান্ত করতে বলেন, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে পলিটিক্যাল রেষারেষিতে আমাদের টানবেন না। এসব কারণে রাজনৈতিক ইস্যুর মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করতে চাই না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, এক পক্ষে রায় গেলে অন্য পক্ষ অখুশি হয়। এটা নিয়ে টকশোতে আলোচনা-সমালোচনা হয়। আর তাতে আমরা ভিকটিমাইজড হই। বিচারকরা টার্গেট হন। আমাদের প্রমোশন আটকে যায়। আপিল বিভাগে যেতে সমস্যা হয়।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকটে জয়নুল আবেদীনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আমাদের ১০ জন বিচারককে আপনারা কলমের এক খোঁচায় না করে দিলেন। এতে পারিবারিকভাবে ওই বিচারকদের পরিবার কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাদের ছেলেমেয়ের কথা একটিবারের জন্যও ভাবলেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসলেতো তারা মামলাও করতে পারতেন না। তাদের মামলা করতে দিতেন না।

আদালত আরও বলেন, আগে বিচারকরা রায় দিতে দুই দিকে (বাদী-বিবাদী) চিন্তা করতেন। আর এখন বাস্তবতা হলো, রায় দিতে তিন দিকে (বাদী-বিবাদী-নিজদের) চিন্তা করতে হয়।

শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, একজন কয়েদির ইচ্ছা অনুযায়ী তো তার পছন্দসই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না। বরং চিকিৎসা হবে জেলকোড অনুযায়ী। আর সে হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালই উপযুক্ত জায়গা। যেখানে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। ওনি (খালেদা জিয়া) সেখানে যেতে চান না। ওনি যাবেন এমন জায়গায়, যেখানে গেলে তার সঙ্গে তার সাঙ্গপাঙ্গরা যোগাযোগ করতে পারবে।

এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের ‘সাঙ্গপাঙ্গ’ শব্দটির বিষয়ে আপত্তি তোলেন।

আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন তাহলে কি তার চিকিৎসা হবে না? তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই হবে। অন্য আসামিদের যেমন হয় তারও তেমনি হবে। তাছাড়া তিনি তো চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেছেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ওনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) মিস লিডিং করছেন। আপনি এটা করতে পারেন না। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি চিৎকার করবেন না। আপনি চুপ করুন। এতো ভক্ত হয়েন না।

অ্যাটর্নিকে উদ্দেশ্য করে আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপনি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে এমপি নির্বাচন করার জন্য এসব কথা বলছেন। তখন আদালত বলেন, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আপনারা এভাবে বলতে পারেন না। পরে উভয়পক্ষ চুপ করে যান। শুনানি শেষে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে আদালত তার কার্যক্রম মুলতবি করেন।

বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বেশ কয়েকবার সময় পেছানোর পর বুধবার ওই আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেকের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।