ছবি - বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

কোটা সংস্কারের আপিল শুনানি জানুয়ারিতে

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কার চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য পুনরায় তারিখ নির্ধারণের জন্য মেনশন স্লিপ (মামলার বিষয় উল্লেখ করে) গ্রহণ করেননি আপিল বিভাগ। ফলে আবেদনটির বিষয়ে আগের নির্ধারিত তারিখ আগামী বছর ১৭ জানুয়ারি বহাল থাকছে।

রিটকারীদের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে মেনশন স্লিপ জমা দেন রিটকারীদের আইনজীবী মো. এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া।

আদালতে শুনানি শেষে রিটকারীদের আইনজীবী মো. এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট। সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করলে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তা শুনানির জন্য ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলার তারিখ নির্ধারণ করেন। তবে শুনানির সে তারিখ আরও এগিয়ে আনতে আজ আপিল বিভাগে মেনশন স্লিপ জমা দেয়া হয়। কিন্তু আপিল আদালত সে স্লিপ গ্রহণ করেননি। এর ফলে আবেদনটি আগামী ১৭ জানুয়ারি শুনানির জন্য বহাল থাকল।

এর আগে গত ৫ মার্চ কোটা সংস্কার চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. একলাছ উদ্দিন ভূইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

তখন একলাছ উদ্দিন ভূইয়া জানিয়েছিলেন, রিট আবেদনে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনি, প্রতিবন্ধী, নারী, জেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সব ধরনের কোটা পদ্ধতি বাতিল চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করে ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপন পুনর্মূল্যায়ন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবেদনে ভুল আছে বলে তা বাতিল করে দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনিসুর রহমান মীর, ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির সদস্য সচিব ও বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার দিদারুল আলম এবং দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটর আবদুল ওয়াদুদ রিট আবেদনটি করেছিলেন।

রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধা সরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী এক শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাঁচ শতাংশ কোটা পদ্ধতি চালু আছে।

সব মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি রয়েছে। বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী।

এ ছাড়া ১৯৭২ সালে যখন কোটা পদ্ধতি চালু হয় তখন দেশে জেলার সংখ্যা ছিল ১৭টি। এখন জেলা ৬৪টি। এ অবস্থায় কোটা পদ্ধতি চালু রাখা বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়।