বাসচাপায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী

জাবালে নূরের মালিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) গ্রহণ করেছেন আদালত। একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।

আজ সোমবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চার্জ গঠনের নতুন এ দিন ধার্য করেন।

আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৭ অক্টোবর পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পলাতকদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আসায় ঢাকা মহানগর হাকিম (এসিএমএম) কায়সারুল ইসলাম মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের মালিকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। পলাতক থাকায় কাজী আসাদ ও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সোহাগ আলী ও রিপন হোসেনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম অভিযোগপত্রটি জমা দেন। এতে ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন- জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং তাদের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ। তাদের মধ্যে শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যান। তবে, কাজী আসাদ ও জাহাঙ্গীর আলম এখনও পলাতক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২৯ জুলাই দুপুরে চালক ও তাদের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর উপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হন। নিহতরা হলেন ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। সেদিন বাস দুটি দুই থেকে তিনবার একে অপরকে ওভারটেক করে।

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। এরপর মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিন বাসের তিন চালক এবং তাদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১)। এরপর গত ১ আগস্ট সন্ধ্যায় র্যাবের পক্ষ থেকে জাবালে নূরের একটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনকে (৬০) গ্রেফতারের খবর জানানো হয়। গ্রেফতার হওয়া ছয়জনকে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, জাবালে নূরের যে তিন বাসের রেষারেষিতে এ ঘটনাটি ঘটে, সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যান দুই শিক্ষার্থী। বাসটি চালাচ্ছিলেন মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ নম্বর বাসের চালক ছিলেন জুবায়ের এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ নম্বরধারী বাসটির চালক ছিলেন সোহাগ।