অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

নাইকো মামলায় এফবিআই ও কানাডা পুলিশের প্রতিবেদন আদালতে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের প্রতিবেদন ঢাকার বিচারিক আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ও এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

‘আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ আবেদনটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে,’ যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নাইকো নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে যা কানাডায় নিবন্ধন করা। নাইকো আমাদের দেশের কয়েকটি গ্যাসফিল্ড লিজ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। নাইকো নানা রকম অসৎপন্থা অবলম্বন করে আমাদের দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে বিশেষ করে হাওয়া ভবনকে প্রভাবিত করে পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ডটি পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে গ্রহণ করে। বাস্তবে সেটি পরিত্যক্ত ছিল না।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, পূর্ব ছাতক গ্যাস গ্যাস ফিল্ড নেওয়ার ব্যাপারে নাইকো কোম্পানি যে ঘুষ প্রদান করে, সে ব্যাপারে কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশ ২০০৫ সালে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত করে তাঁরা প্রমাণ পায়, নাইকো তার দেশ থেকে টাকা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে পাঠায়। বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষ প্রদান করেছিল। এ ব্যাপারে দুদক ২০০৮ সালে মামলা করে, যা বিচারাধীন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘২০১৭ সালে আমি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। তদন্ত করে তাঁরা যে তথ্য পেয়েছেন তা পাঠাবার জন্য। আমাদের অনুরোধ সাড়া দিয়ে কানাডার মাউন্টেড পুলিশ তদন্ত করে যে প্রতিবেদন তৈরি করে তা পাঠিয়েছে। একইভাবে এফবিআইও প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তাঁদের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশের যে দুজন সদস্য এবং এফবিআইয়ের যে কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন, তাঁরা যাতে এ দেশে এসে তাঁদের প্রতিবেদনের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য দিতে পারেন সে জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশের দুজন কর্মকর্তা এবং এফবিআইয়ের কর্মকর্তা যাতে বাংলাদেশে আসতে পারেন সে জন্য তাঁদের অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তাঁদের তদন্তে উঠে এসেছে, কীভাবে কানাডা থেকে অন্যান্য দেশে বিশেষ করে ক্লেইমেন আইল্যান্ড, সেখান থেকে সুইজারল্যান্ড, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র, এরপর বাংলাদেশে এসে ঘুষের টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্যাসে ভর্তি ফিল্ডকে পরিত্যক্ত দেখিয়েছিল। নাইকো প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দেশের ক্ষতি করেছেন। এ ব্যাপারে যারা তাঁদের সহযোগিতা করেছেন তারা মামলার আসামি। আসামির তালিকায় আছেন খালেদা জিয়া, তাঁর অনেক সহযোগী আছেন। নাইকো যাদের নিয়োগ করেছিল তাদের আসামি করা হয়েছে।

নাইকো দুর্নীতি মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর আদালত আগামী ৩ জানুয়ারি শুনানির দিন ঠিক করেন। সেদিন পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজির হন অন্য দুটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নাইকো দুর্নীতি মামলার ১১ আসামি হলেন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত জ্বালানি সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, নাইকোর (দক্ষিণ এশিয়া) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেন, মীর মঈনুল হক ও শফিউর রহমান ।

এর মধ্যে কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, কাশেম শরীফ ও মীর মঈনুল হক পলাতক। শফিউর রহমান মারা গেছেন।