অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

‘দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের নির্বাচনে সুযোগ দেয়া সংবিধানের অবমাননা’

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের নির্বাচনে সুযোগ দেয়া সংবিধানের অবমাননা উল্লেখ করে ‘দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারবেন না- চেম্বার আদালতের আদেশ আপিল বিভাগে বহাল থাকা জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের জন্য একটি মেসেজ’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন, তারা নিজেদের কলুষমুক্ত রাখবেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। এ আদেশে এমন একটি মেসেজ যাবে।’

আজ রোববার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের বেশি যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। ‘আজকের আদেশ আপনি কীভাবে দেখছেন’- জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এ আদেশ অবশ্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘অপরাধ করে তারপর আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন- এটা আমাদের সংবিধান প্রণেতারা চাননি। যে কারণে ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধানে আইনটি সন্নিবেশিত হয়েছে।’

‘আপনি যে সংবিধান প্রণেতাদের কথা বললেন সেই সংবিধান প্রণেতার একজন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন। তাহলে কি তিনি ভুল বলেছেন’- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে একজন। ষোড়শ সংশোধনীতে তিনি যে ডিগবাজি খেয়েছেন ওনার পক্ষে সব রকম কথা বলা সম্ভব।’

‘সরকার বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন’- বিএনপির আইনজীবীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় যদি কোনো ব্যক্তি দোষী-সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা বিশেষ কোনো দলের বিষয় নয়। সর্বজনীনভাবে সব লোকের জন্য প্রযোজ্য।’

‘তবে এটা খুব শক্তভাবে ধরার ফলে এখন থেকে যারা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন, তারা নিজেদের কলুষমুক্ত রাখবেন। তাদের কাছে একটা মেসেজ যাবে, জনপ্রতিনিধি হতে হলে তাকে সৎ হতে হবে, মামলা-মোকদ্দমায় যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত না হন; এমন কাজ তারা করবেন না।’

‘আজকের এ আদেশ একটি সতর্কবার্তা’ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘জনগণের প্রতিনিধি হতে হলে নিজকে নিষ্কলঙ্ক হতে হবে। কোনো রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। এতে তারা নিজেরাই এখন হুঁশিয়ার হয়ে যাবেন।’

‘দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের নির্বাচনে সুযোগ দেয়া সংবিধানের অবমাননা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংসদ সদস্য পদে থাকা অবস্থায় দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার সদস্য পদ চলে যাবে। এ বিষয়ে এরশাদের মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আছে বলেও উল্লেখ করেন মাহবুবে আলম।

প্রসঙ্গত, যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ছয় বছরের সাজা ও দণ্ড বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) স্থগিত করেছিল হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ। পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদনে চেম্বার আদালত শনিবার তা স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। আপিল বিভাগ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আজ চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবিরার অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকল না। পাশাপাশি তার মত যারা দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত তাদের নির্বাচন করার পথও আর খুললো না।