১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করবেন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা

পুলিশ হেফাজতে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন প্রায় ২০০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে অথবা টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের থাকার কথা রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি দিনটি ঠিক রেখে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ পর্বটি সম্পন্ন করার প্রস্তুতি চলছে। আত্মসমর্পণের পর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা চূড়ান্ত করার কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশি হেফাজতে থাকা কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাঁরা শুনেছেন আত্মসমর্পণের পর তাঁদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে আনা হবে। তবে এ ব্যাপারে তাঁরা স্পষ্ট কিছু জানতে পারেননি। পুলিশও কিছু জানায়নি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আত্মসমর্পণ করলেই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সবকিছু মাফ হবে—তা না।

কয়েকজন পুলিশ বলেন, আত্মসমর্পণের জন্য ১২০ জনের মতো মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হেফাজতে এসেছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারির আগে এই সংখ্যা প্রায় ২০০ হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও ২০২ জন ইয়াবা কারবারির তালিকা চূড়ান্ত করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় ১ হাজার ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ জন প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারি (গডফাদার)। তাঁদের ৬৬ জনই টেকনাফের বাসিন্দা।

হেফাজতে থাকা উল্লেখযোগ্য ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির তিন ভাই আবদুল আমিন, মো. শফিক ও মো. ফয়সাল, চাচাতো ভাই মো. আলম, খালাতো ভাই মং মং সিং, ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপু, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া, ভাইপো মো. সিরাজ, হ্নীলার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা ও জামাল হোসেন, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, নারী কাউন্সিলর কহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, টেকনাফ সদর ইউপি সদস্য এনামুল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহর দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ২ থেকে ১৬টি মামলা রয়েছে।

গত বছরের ৪ মে থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুধু কক্সবাজার জেলায় ৪৪ মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফে মারা গেছেন ৪০ জন।

পুলিশ জানিয়েছে, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন থেকে আত্মসমর্পণ করছেন প্রায় ৫১ জন। টেকনাফ সদর ও পৌরসভা থেকে ৪২ জন, হ্নীলা ইউনিয়ন থেকে ২৪ জন। অন্যরা হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব কটি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আবদুর রহমান ও ইয়াবা গডফাদার হিসেবে তাঁর পাঁচ ভাই, এক বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম রয়েছে।