বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ

জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিন শিশু শিক্ষার্থী ও এক কলেজছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে একলাখ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।

চট্টগ্রামে ২২ জানুয়ারি ৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী ও ১৬ জানুয়ারি এক কলেজ শিক্ষার্থী এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জে সহোদর দুই শিশু ২৮ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

এ ঘটনায় হাইকোর্টে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে রিট করা হয়।

পরে আব্দুল হালিম বলেন, এ তিন ঘটনায় নিহত চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ঘটনার প্রতিবেদন কিংবা মামলা ও নিহতদের নাম পরিচয়, চালক ও পরিবহনগুলোর মালিকের পরিচয় আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রুলও জারি করেছেন আদালত। রুলে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ ও বিধি অনুসারে মোটরযান চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণে ব্যর্থতা, ওইসব ঘটনায় মামলা না করা, চালকদের গ্রেফতার না করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনারসহ ১৪ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আব্দুল হালিম আরও জানান, এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ এপ্রিল আদেশের জন্য রেখেছেন।

গত ২২ জানুয়ারি বাসা থেকে বের হয়ে টেম্পো করে স্কুলে যাচ্ছিল কাজী মাহমুদুর রহমান (১৪)। কিন্তু স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। পথে টেম্পোর সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এসময় মাহমুদুর ও অটোরিকশার চালককে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই মাহমুদুরের মৃত্যু হয়। সে চট্টগ্রামের সরকারি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

২৮ জানুয়ারি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর মোল্লার পুল এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ভাই-বোন নিহত হয়। তারা হলো- হাসনাবাদ কসমোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আফরিন (১৩) ও তার ছোট ভাই একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আফসার উদ্দিন (১০)।

দুপুরে স্কুল ছুটির পর ডালিম তার দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাজেন্দ্রপুর মোল্লার পুল এলাকায় পৌঁছালে একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়।

১৬ জানুয়ারি কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়া (১৮)। বাসযোগে কোতোয়ালীর মোড়ে নেমে পার হচ্ছিলেন রাস্তা। কিন্তু কে জানতো, রাস্তা পার হতে গিয়ে নিজেই চলে যাবেন জীবনের ওপারে। কোতোয়ালী মোড়ে কাভার্ডভ্যানচাপায় তিনি প্রাণ হারান।