দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি)

বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশ ১১২ তম

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউজেপি) বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে ১২৬টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের মতোই—চতুর্থ। এ ক্ষেত্রে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।

ডব্লিউজেপি গত বৃহস্পতিবার ‘আইনের শাসন সূচক-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সংস্থাটির ২০১৮ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল। এ বছর নতুন করে ১৩টি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হয়। এতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও পিছিয়ে যায়। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়া ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর একই রয়েছে। প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা শীর্ষ তিন দেশ ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। তলানিতে রয়েছে কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনেজুয়েলা।

১২৬টি দেশের ১ লাখ ২০ হাজার খানায় জরিপ ও ৩৮০০ জন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে ডব্লিউজেপি এই সূচক ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সূচকের ভিত্তি মূলত আটটি। এগুলো হলো সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, উন্মুক্ত সরকার, মৌলিক অধিকার, নিয়ম ও নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ, নাগরিক ন্যায়বিচার এবং ফৌজদারি বিচার।

বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কোন ধরনের সূচকের ভিত্তিতে ও কীভাবে এই সূচকটি তৈরি হলো, আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে। তবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি একটি পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন। কেননা নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শাসনতান্ত্রিক অবস্থান কেমন তা আপনারা ভালো করে জানেন। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের অবস্থাও কারও অজানা নয়। তাহলে এসব দেশ কীভাবে বাংলাদেশের চেয়ে আইনের শাসনে ভালো অবস্থানে থাকে।’

ডব্লিউজেপি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটটি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে মৌলিক অধিকারের সূচকে। ১২৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ১১৯তম অবস্থানে রয়েছে। নিয়ম ও নিরাপত্তার সূচকে বাংলাদেশ ১১৬ ও ফৌজদারি বিচারে ১১৪তম অবস্থানে রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে উন্মুক্ত সরকারের সূচকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা যাঁরা বাংলাদেশের আইনের শাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছি, তাঁরা ওই প্রতিবেদনটির মতোই একই চিত্র দেখতে পাচ্ছি। সরকার থেকে মনে করা হচ্ছে, বড় বড় সড়ক-সেতু ও অবকাঠামো নির্মাণ করলেই দেশের উন্নতি হয়ে গেল। এসব উন্নতি আমরাও চাই, কিন্তু তার সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।’

ডব্লিউজেপির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বের ৬১টি দেশের আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের নিচে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমার, ইথিওপিয়া, মিসর ও ইরান। প্রথম আলো