অর্পিত সম্পত্তি আইন

অর্পিত সম্পত্তি বনাম অমিমাংসিত জটিলতা : পর্ব-১

রাজীব কুমার দেব : 

“মাত্র ১৭ দিন…! ভারত -পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানা পোড়নের ফসল।” এই ১৭ দিন জন্ম দিয়েছে “শত্রু সম্পত্তি” মতান্তরে “অর্পিত সম্পত্তি” নামক একটি ইতিহাস। এই ১৭ দিন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম দিয়েছে ২টি অধ্যাদেশ, একটি বিধিমালা ও একটি নির্বাহী বিভাগের আদেশ এবং বাংলাদেশে জন্ম দিয়েছে ৩টি অধ্যাদেশ, একটি মূল আইন তদসহ সংশোধনী ও বিধিমালা এবং কতেক নির্বাহী বিভাগের আদেশ। এই ১৭ দিন জন্ম দিয়েছে বিরোধ ও আইনি জটিলতা। এই ১৭ দিন জন্ম দিয়েছে শত্রু / অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত সম্পত্তির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং বন্দোবস্তির কার্যক্রম। এই ১৭ দিন জন্ম দিয়েছে চলমান আইন ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিরোধ ও আইনি জটিলতা নিষ্পত্তিতে উচ্চাদালত হতে প্রচারিত ঐতিহাসিক রায়।

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যায় ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয় যা ১৭ দিন স্থায়ী ছিল। তখন উভয় দেশই শত্রু সম্পত্তি বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় কিন্তু তাসখন্দ চুক্তির পর ভারত শত্রু সম্পত্তি অধ্যাদেশ রহিত করলেও পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ, ১৯৬৫ ও পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধিমালা, ১৯৬৫ এবং পূর্ব পাকিস্তান শত্রু সম্পত্তি (জমি ও ইমারত) প্রশাসন ও নিষ্পত্তিকরণ আদেশ, ১৯৬৬ এবং একটি নির্বাহী আদেশ জারী করে। এই সকল আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যেসব নাগরিক ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগে থেকে ভারতে ছিল এবং সেই তারিখ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতে চলে গিয়েছিল, তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় (census list) যার মালিকানা পাকিস্তান সরকার অস্থায়ীভাবে নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর উক্ত অধ্যাদেশ ও বিধিমালার কার্যকারিতা রহিত হয়ে যাওয়ায় ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ১৯৬৯ সালের “Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) Ordinance (Ord. No. I of 1969) এর মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তি সংক্রান্ত বিধান চালু রাখা হয়। অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ” The Laws of Continuance Enforcement Order, 1971 এবং রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ২৯ নং আদেশ অনুসারে “the Bangladesh Vesting of Property and Assets Order, 1972” পূর্ব পাকিস্তান সরকারের “শত্রু সম্পত্তি” বাংলাদেশ সরকারের “অর্পিত সম্পত্তি” বলে পরিগণিত হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) (Repeal) Act, 1974 (XLV of 1974) আইনটির মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং এরপর Vested and Non-resident Property (Administration) Act, 1974 (XLVI of 1974) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইতিপূর্বে সরকারের কাছে থাকা অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) (Repeal) Amendment Ordinance 1976 (Ordinance No.XCII of 1976) আনা হয়। বর্তমানে কতিপয় সম্পত্তি বাংলাদেশী মূল মালিক বা তার বাংলাদেশী উত্তরাধিকারী বা উক্ত মূল মালিক বা উত্তর উত্তরাধিকারীর বাংলাদেশী স্বার্থাধিকারী (Successor-in-interest) এর নিকট প্রত্যর্পণ করা বা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা ২০১২ প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে বিভিন্ন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে শত্রু/ অর্পিত সম্পত্তির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং বন্দোবস্তির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ১৯৬৬ সালের ১৪ মার্চ উপ-তত্ত্বাবধায়ক (পরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ, পূর্ব পাকিস্তান) শত্রু সম্পত্তির (জমি ইমারত) দখল গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা, শত্রু সম্পত্তি (জমি ও ইমারত) চিহ্নিতকরণ, দখলগ্রহণ এবং অনধিক এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান, ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি আইন তদ সহ ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ, ১৯৭৭ সালের ২৩ মে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির (জমি ও ইমারত) ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন ও বিলিবন্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশাবলি (চার খন্ড) জারি করা হয় যাতে সরকার বরাবর অর্পিত সকল শত্রু সম্পত্তির প্রশাসন, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, হস্তান্তর ইত্যাদি সরকার অথবা সরকার নির্দেশিত কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত করা হয়। আবার ১৯৭৬ সালের ৯২ ও ৯৩ নম্বর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘লুক্কায়িত অর্পিত সম্পত্তি’ অধিগ্রহণকৃত অর্পিত সম্পত্তি যদি জনস্বার্থে কোনো সংগঠন, সংস্থা কিংবা ব্যক্তিকে লিজ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সেই সম্পত্তি আর তার মূল মালিকও ফেরত পাবেন না।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪২ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা- নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি- ব্যবস্থা করবার অধিকার থাকবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাবে না। এই অনুচ্ছেদের মর্মবাণী শত্রু সম্পত্তি তৎপরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি নামক ধারণাকে চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উচ্চাদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে। নতুনভাবে যাতে কোন সম্পত্তি অর্পিত তালিকাভূক্ত না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্রসমূহও অনেক বেশি সতর্ক ছিল। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ তারিখে প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তির পর আর কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি ওই শত্রু সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে নতুনভাবে শত্রু সম্পত্তি নিতে নিষেধ করেছে। আবার এ প্রসংগে আরতি রানী পাল বনাম সুদর্শন কুমার পাল এবং অন্যান্য (৫৬ ডিএলআর ৭৩ (এডি) মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট মত প্রকাশ করেন, শত্রু সম্পত্তি আইন (অর্ডিন্যান্স নং ১৯৬৯ এর ১) রহিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে আইনটি আপনা আপনি বাতিল হয়ে গেছে। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পর হতে নতুন কোনো সম্পত্তি ঐ আইনের আলোকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা যাবে না, কারণ আইনটি ইতোমধ্যে মৃত।আর শত্রু সম্পত্তি আইন সম্পর্কে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে সাজু হোসেন বনাম বাংলাদেশ (৫৮ ডিএলআর,পৃ.১৭৭) মামলায় বলেছেন ‘শত্রু সম্পত্তি একটি মৃত আইন, এর ভিত্তিতে নতুন করে কোনও সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা বেআইনি। মহামান্য হাই কোর্ট ১৫ বি এলডি ১ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… as V.P. in the year 1979 by starting a V. P. case – is absolutely illegal and without jurisdiction…” এমনকি মহামান্য হাই কোর্ট ২৬ ডি এল আর ৩৫৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… After December, 1971 – no property can vest on govt. on enemy property… ” এমনকি মহামান্য হাই কোর্ট ২৬ ডি এল আর ৩৫৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “…Mere residence in India – doesn’t enemy property…”

২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তির আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অর্পিত সম্পত্তির তালিকা হতে অবমুক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৪২ ধারা মোতাবেক ঘোষনামূলক মামলা আনয়নের convention প্রচলিত ছিল। এই আইনের অধীনে অর্পিত সম্পত্তি নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে দেওয়ানী আদালতে ঘোষণামূলক মামলা আনয়ন করা হত। আদালতের ঘোষণা অনুসারে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ প্রজাসতব আইন ও ভূমি ম্যানুয়াল মোতাবেক ভূমি অফিস বাদীর নামে লেটেস্ট খতিয়ান সৃজন করত। তবে এই ধরণের ঘোষণামূলক মামলা নিষ্পত্তিতে যে আইনগুলো বিবেচনায় নেয়া হতো তা হলো – ক) Defence of Pakistan Ordinance, 1965 (Ord. No. XXIII of 1965), খ) Defence of Pakistan Rules, 1965 এবং উক্ত Rules এর অধীন প্রদত্ত আদেশের যতটুকু দফা (উ) তে উল্লেখিত Act বলে হেফাজতকৃত; গ) Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) Ordinance, 1969 (Ord. No. I of 1969) (যাহা Act XLV of 1974 দ্বারা রহিত), ঘ) Bangladesh (Vesting of Property and Assets) Order, 1972 (P. O. No. 29 of 1972), ঙ) Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) (Repeal) Act, 1974 (XLV of 1974), চ) Vested and Non-resident Property (Administration) Act, 1974 (XLVI of 1974 ছ) ১৯৬৫ হতে ১৯৭৬ সন পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গেজেট প্রকাশিত নির্বাহী বিভাগের আদেশ। বর্ণিত আইন এবং নির্বাহী বিভাগের আদেশ মূলে অর্পিত সম্পত্তি নিষ্পত্তি সংক্রান্তে ঘোষণামূলক মামলা সমূহ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে মহামান্য উচ্চাদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। তবে বর্ণিত ছয়টি আইন এবং অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্তে মহামান্য উচ্চাদালতের সিদ্ধান্ত সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাদী পক্ষের এমন কিছু Ground of Defence ব্যবস্থা করা হয়েছে যেগুলো বিবেচনায় নিয়ে উক্তরূপ ঘোষণামূলক মামলা সমূহ নিষ্পত্তি হতো। এখন দেখা যাক Ground of Defence গুলো কি কি। উল্লেখ্য আলোচনার সুবিধার্থে Ground of Defence কে উচ্চাদালতের সিদ্ধান্তসহ আলোচনা করা হলো।

১.
যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্তি করণ – পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ” The Laws of Continuance Enforcement Order, 1971 এবং রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ২৯ নং আদেশ অনুসারে ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) (Repeal) Act, 1974 (XLV of 1974) আইনটির মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং এরপর Vested and Non-resident Property (Administration) Act, 1974 (XLVI of 1974) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইতিপূর্বে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শত্রু সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের অর্পিত সম্পত্তি বলে পরিগণিত হয়। উল্লেখ্য যে, কোন সম্পত্তি যদি ১৯৬৯ ইং সনের পর অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয় সেটি সঠিক অন্তর্ভূক্তিকরন নয় বলে উচ্চাদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। মহামান্য হাই কোর্ট ১৫ বি এল ডি ১ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Ord. 92 of 1976 (1966) contains a saving clause for protecting the existing proceedings and list of V.P. excepting this saving clause the V.P. law was totally repealed by this Ord. Consequently, treating the suit land as V.P. in the year 1979 by starting a V.P. is absolutely illegal and without jurisdiction…” আবার মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগ ৫০ ডি এল আর ৪৪৪ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… There is no evidence and materials on record showing the vendor of the petitioner migrated to India before 1965 and the proceeding treating the suit plot as vested property in 1980 is illegal and inoperative…” মহামান্য আপীল বিভাগ ৩৩ ডি এল আর ৭৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “…Treating a property as E.P. in 1978 is not valid in law… ” মহামান্য হাই কোর্ট ৩১ ডি এল আর ৩৫৯ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “…Property treating V.P. without lawful basis and leased out – is illegal and unauthorised. ” ২০০৪ সালের ১৪ ই আগষ্ট তারিখে Saju Hossain Vs Bangladesh (58DLR (AD) (2006) মামলায় মহামান্য আপীল আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, “Since the law of enemy property itself died with the Repeal Ordinance No.1 of 1969 on 23 March 1974 no further vested property case can be started thereafter on the basis of the law which is already dead.” তাছাড়া মহামান্য আপীল বিভাগ Khondokar Delwar Hossain, Secretary of B.N.P. and others Vs. Bangladesh Italian Marble -14- Works Ltd. and others (ADC 2010 Vol-VI(B, (5th Amendment case)’ মামলায় Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) (Repeal) Amendment Ordinance 1976 (Ordinance No.XCII of 1976) আইন কে অবৈধ, বাতিল মর্মে ঘোষণা করেছেন।

২.
প্রমাণের দায় – ঘোষণার মামলায় কতেক ক্ষেত্রে বাদী পক্ষ “Burden of proof” কে “Ground of Defence” হিসেবে plea নিতে পারতেন। যেমন – অর্পিত সম্পত্তির “legal Foundation” বা “basis of enlistment” বা “census list” ইত্যাদি কে বাদী পক্ষ Ground of Defence” হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন এই যুক্তিতে এই Ground of Defence প্রমাণের দায়িত্ব বিবাদী সরকার পক্ষের। – এ সংক্রান্তে মহামান্য আপীল বিভাগ ১৭ বি এল ডি ৩২৪ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… When the defendant failed to prove the very basis of enlisting the suit land as vested property in census list and the plaintiff adduced some evidence to prove his interest plaintiff claim of title could not be resisted…” মহামান্য আপীল বিভাগ ৫০ ডি এল আর ৭০ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… When govt. failed to prove the legal foundation for… the land in the census report, it cannot be vested property…” মহামান্য আপীল বিভাগ ৫৬ ডি এল আর ৫৮ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Since the V.P. authority has prepared the census list merely on the basis of wrong R.S. khatian, it can not be tenable …” মহামান্য আপীল বিভাগ ৩২ ডি এল আর ২৯ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “…A person in possession through kabala burden to show E.P. character upon govt… ” মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগ ৬ বি এল সি ৩৫৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “…A mere claim by the government that a certain property by vested property has no sanctity in the eye of law unless that claim is proved by the govt. by cogent legal evidence and onus of strict proof of it lies sakuyarel সকুয়ারেল্যভন govt.. ”

৩.
বাংলাদেশে অবস্থানের বিষয়ে অনুমান – বাংলাদেশ স্বাধীনের পর অর্থাৎ ১৯৭১ সাল হতে ঘোষণা মামলা দায়েরের আগ পর্যন্ত সময়ে বাদী বা তার পূর্বসূরি যদি বাংলাদেশে অবস্থান করেন তাহলে সেই অবস্থানকালীন সময় কে মামলায় বিবেচনা করা হতো। এ বিষয়ে মহামান্য হাই কোর্ট ৩২ ডি এল আর ২৫২ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Kabala executed in Bangladesh in 1975 – presumption is the executant was citizen of Bangladesh as no Indian national could transfer any property in Bangladesh in 1975.. ” মহামান্য হাই কোর্ট ২ বি এল সি ৪৯৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Govt. treating the petitioner a citizen of Bangladesh issued all notices at his notices at Chittagong and now govt. cannot say that he is not a citizen of Bangladesh and petotioner’s property cannot treat as V.P…” মহামান্য আপীল বিভাগ ১৩ বি এল টি ৩৬ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Since the father and uncle being in Bangladesh in the year 1975, transferred the suit property, by deed of gift, cannot be declared as enemy property…” মহামান্য হাই কোর্ট ২৭ ডি এল আর ৬১৪ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… One member of family present – not abandoned… ”

৪.
দেবত্তোর সম্পত্তি- ঘোষণামূলক মামলায় দেবত্তোর সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি নয় মর্মে উচ্চাদালতে সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ প্রসংগে মহামান্য হাই কোর্ট ৫০ ডি এল আর ২৭৩ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “.. Debittor property in any way cannot be taken over as an enemy property…”

৫.
ইস্টোপেল নীতি – অর্পিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ইস্টোপেল নীতি প্রযোজ্য হবে না মর্মে উচ্চাদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এ প্রসংগে মহামান্য হাই কোর্ট ৩ বি সি আর এল আর ২২৫ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, “… Mere prayer to govt. for lease didn’t estop to challenge the enemy character of property… ” উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ঘোষণা মূলক মামলায় মহামান্য আপীল বিভাগ ১৭ বি এল ডি ৩২৪ এ প্রকাশিত একটি সিদ্ধান্তে আদেশ প্রচার করেছেন যে, “In suit for declaration of title and also further declaration that the proceeding taken in vested property case no. 6/1984 in respect of the said property is illegal, void and not binding upon them.”

লেখক : জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার।

চলবে…