আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ফাইল ছবি)

মানবতাবিরোধী অপরাধে নেত্রকোনার ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আমীর হোসেন ও মো. আবু আহমেদ জমাদার।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার ৫ আসামি হলেন— শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)।

এরা সবাই পলাতক। মোট সাতজন আসামির মধ্যে আব্দুর রহমান (৭০), আহাম্মদ আলী (৭৮) গ্রেফতারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থায় মারা যান।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।

এর আগে সোমবার ২৮ জানুয়ারি এ মামলার ওপর শুনানি শেষে সিএভি (মামলায় যে কোনো দিন রায়) ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল (২৭ মার্চ) ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য আজকের (২৮ মার্চ) দিন ঠিক করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।

২০১৬ সালের ২২ মে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুর উদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বতর্মানে তারা বিএনপির সমর্থক।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির মামলাটি করেন।