জিয়ার শাসনামলে সেনা সদস্যদের বিচারের বৈধতা প্রশ্নে রিট শুনানি সোমবার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আইনে সেনা সদস্যদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং ফাঁসি দিয়ে লাশ কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে দায়েরকৃত রিট শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। আগামীকাল সোমবার (৬ মে) বিষয়টি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসলে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আজ রোববার (৫ মে) রিটটি উপস্থাপন করা হলে শুনানির জন্য গ্রহণ করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ বিষয়ে রিট দায়েরকারী আইনজীবী মতিউর রহমান জানান, আজ (রোববার, ৫ মে) রিট আবেদন উপস্থাপনের পর আদালত এটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। সোমবার (৬ মে) বিষয়টি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসলে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮৮টি পরিবারের সদস্যদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আইনে সেনা সদস্যদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং ফাঁসি দিয়ে লাশ কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান জানান ওই ঘটনায় সে সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না রিটে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে সেনাবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

তিনি জানান, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আইনে সেনা সদস্যদের বিচার ও লাশ গুমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। রিটে ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আইনজীবী আরও জানান, বিমানবাহিনীর এক বিদ্রোহের ঘটনায় ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর জিয়ার অবৈধ সামরিক আদালতে দণ্ড ও সাজাপ্রাপ্তদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর পর্যন্ত বকেয়া বেতন, অন্যান্য সব সুবিধা, পেনশনসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। জেনারেল জিয়াউর রহমানের অবৈধ মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৭ এর অধীনে সামরিক আদালতে দণ্ড এবং সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেই দণ্ডাদেশের সময় থেকে চাকরির স্বাভাবিক অবসরের সময় পর্যন্ত পদ-পদবি অনুযায়ী তাদের চাকরির সমস্ত বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সব সুবিধাসহ পেনশন না দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী কেন সরকারি চাকরি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে যুক্ত করা একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, ‘১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে ভয়াবহ এক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। কঠোরভাবে সেই বিদ্রোহ দমন এবং সামরিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার মানুষ। নিখোঁজ হন আরও অসংখ্য।’

২০১০ সালের ২ অক্টোবর সে বিদ্রোহের পুনঃতদন্ত দাবি করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিমানবাহিনী বিদ্রোহের ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

তাদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়, ১৯৭৭ এর বিমানবাহিনী বিদ্রোহের পর অন্যায়ভাবে অনেক বিমানসেনাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাদের অনেকের লাশও পাননি পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ওই ঘটনার পর অনেকের সন্ধান মেলেনি। আজও বিচার হয়নি সেই ঘটনার, কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারগুলো। তারা সেই ঘটনা পুনঃতদন্ত করে দেখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

রিটকারীদের আইনজীবী মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্শাল ল’ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৭ দ্বারা সামরিক আদালতে জিয়াউর রহমান অন্যায়ভাবে বিচার করেছিল। সেই বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, যাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল এবং যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিল সেসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার জন্য এই রিট আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেআইনিভাবে যাদের সাজা দেয়া হয়েছিল তাদের যেন মাফ করে দেয়া হয় এবং যারা মারা গেছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পোষ্যদের যাতে সরকারি চাকরিতে অ্যাকোমোডেট করে মূলত এই বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে রিটে।

আরও পড়ুন : জিয়ার শাসনামলে সেনা সদস্যদের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট