মবিনুল হক জোসেদ

বাড়ী ভাড়া আইন জানি, অধিকার সচেতন হই

মবিনুল হক জোসেদ :

দ্রব্য মূল্যের দাম যেমন একদিকে বেড়ে চলছে, তেমনি লাগামহীন এবং অনিয়ম করেই বাড়ানো হচ্ছে বাড়ী ভাড়া। পিয়ন, তরকারী ব্যবসায়ী বা নেতাদের যেমন দৌরাত্ম, এই দৌরাত্মে বাড়ীর মালিকরা ও কোন অংশে কম না। যদিও আমাদের দেশে বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ নামের একটি আইন আছে, তারপরও বাড়ীর মালিকরা কোনরূপ আইনের তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমত বাড়িয়ে নিচ্ছেন বাড়ীর ভাড়া। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও বাড়ীর মালিক বছরে বছরে ভাড়া বাড়ান, আবার অনেকে ৬ মাসে ও ভাড়া বাড়াতে কার্পণ্য করেন না। এজন্য জনগণের আইন সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত, যাতে অন্তত নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন থাকা যায়।

সচরাচর যে অনিয়মগুলো চোখে পড়ে, তার মধ্যে- অগ্রীম ভাড়া বাবদ ৩/৪ মাসের অতিরিক্ত ভাড়া দাবী, নিয়ম না মেনে ভাড়া বাড়ানো, মানসম্মত বাসা ভাড়ার চাইতে বেশি ভাড়া নেওয়া, প্রয়োজনীয় মেরামতের জন্য বাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি।

বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন, ১৯৯১ অনুসারে- সরকার কোন এলাকার জন্য এই আইনের অধীন অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক এবং উপ-নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করবেন।

নিয়ন্ত্রক, বাড়ীর মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন ভাড়ীর মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করেন। কোন বাড়ীর মালিক মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত কোন প্রিমিয়াম, সেলামী, জামানত বা অনুরূপ কোন অর্থ দাবী করতে পারবেন না এবং নিয়ন্ত্রকের অনুমতি ব্যতীত অগ্রিম ভাড়া বাবদ ১ মাসের বেশি ভাড়া দাবী করতে পারবেন না। কোন বাড়ীর ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক বৃদ্ধি করা হলেও উক্ত অধিক ভাড়া কোনভাবেই আদায়যোগ্য হবে না।

বাড়ীর মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনক্রমে নিয়ন্ত্রক মানসম্মত ভাড়া প্রতি ২ বছর পর পুনঃনির্ধারণ করবেন তবে বাড়ীর মালিক প্রয়োজনীয় মেরামতের অন্তর্ভুক্ত নয় এরূপ কোন সংযোজন বা উন্নয়ন করে থাকলে, বাড়ী মালিক এবং ভাড়াটিয়া পরস্পর সম্মত হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেন বা কোন বাড়ীর পৌর অভিকর, কর বা টোল যার কোনো অংশ ভাড়াটিয়া কর্তৃক প্রদত্ত হলে সে টাকা মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত হিসেবে বাড়ীর মালিককে প্রদেয় হবে।

এই আইনের অধীন প্রত্যেক অভিযোগ অপরাধ সংগঠনের ৬ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের নিকট লিখিতভাবে দায়ের করতে হবে এবং উক্তরূপ দরখাস্তের শুনানী নিয়ন্ত্রক ৩ মাসের মধ্যে সমাপ্ত করবেন তবে ভাড়াটিয়া কর্তৃক মেরামতের অনুমতির দরখাস্ত ১ মাসের মধ্যে সমাপ্ত করবেন।

যদি কোন ব্যক্তি-

১) মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা অধিক ভাড়া গ্রহণ করেন, তবে উক্ত ব্যক্তি প্রথমবার অপরাধের জন্য অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ড এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার অপরাধের জন্য অতিরিক্ত টাকার তিঙগুণ অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবেন।

২) মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম, সেলামি গ্রহণ বা দাবী করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার অপরাধের জন্য অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার তিন গুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

৩) নিয়ন্ত্রকের অনুমতি ব্যতীত এক মাসের অধিক ভাড়া গ্রহণ করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার দিগুণ অর্থদণ্ড এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার অপরাধের জন্য তিনগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এই আইনের অধীন অর্থদণ্ড ৩০ দিনের মধ্যে আদায় করতে হবে এবং পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা সরকারি দাবী হিসেবে আদায়যোগ্য হবে।

অনেক ভাড়াটিয়া এরকম অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেও বাড়ীর মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন না এই আশঙ্কা থেকে যে, বাড়ীর মালিক যে কোন সময় ভাড়াটিয়াকে বের করে দিতে পারেন। কিন্তু বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন,১৯৯১ এর ১৮ ধারা মতে- কোন ভাড়াটিয়া অনুমোদনযোগ্য ভাড়া যতদিন পর্যন্ত পূর্ণমাত্রায় আদায় করবেন এবং ভাড়ার শর্তাদি পূরণ করবেন, ততদিন বাড়ীর মালিক ভাড়াটিয়াকে বেদখল করার ক্ষমতা রাখেন না।

আসুন, আইন জানি, নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হই।

লেখক : আইনজীবী