নতুন আইনেও মাদক মামলার বিচারে গতি আসেনি

নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এ সংক্রান্ত মামলার বিচারের জন্য পৃথক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আইনটি পাসের ৬ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়নি। ফলে নতুন আইন হলেও মাদক মামলার বিচারে কোনো গতি আসেনি। বর্তমানে সারাদেশের আদালতগুলোয় দেড় লাখের বেশি মাদক মামলা বিচারাধীন। বিচারে ধীরগতির কারণে শাস্তির দৃষ্টান্ত কম তৈরি হচ্ছে, তেমনি অপরাধও বাড়ছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হলে সিনিয়র জজ নিয়োগ দিতে হবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, আলাদা ট্রাইব্যুনাল না হলেও বিচার বন্ধ হবে না। আইনে বলা আছে, যতক্ষণ না পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে, ততক্ষণ অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া যাবে।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ পাস হয়। ১৯৯১ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন রহিত করে আরও যুগোপযোগী করে নতুন এই আইন পাস করা হয়।

বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজদের ওপর মাদক মামলার বিচার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্পিত রয়েছে। ফলে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতগুলোকে মূল দায়িত্বের পাশাপাশি মাদক মামলার বিচার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনতিই বিচার বিভাগে মামলার জট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। অধস্তন আদালতগুলোয় ৩০ লাখের ওপর মামলা বিচারাধীন। একটি মামলার বিচার শেষ করতে বছরের পর বছর এমনকি যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে মাদক মামলার বিচারের যে সময়সীমা আইনে নির্ধারিত আছে, সে অনুযায়ী তা হচ্ছে না।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার কারণে বিচারকাজ পরিচালনায় বিচারকরা হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে মামলার বিচারে গতি আসছে না। এ কারণে আরও বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। মামলার তুলনায় আমাদের উচ্চ ও নিম্ন আদালত-সবখানেই বিচারক কম। তাই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক নিয়োগ জরুরি।

২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে-ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারের জন্য অভিযোগপত্র হাতে পাওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ট্রাইব্যুনালকে বিচারকাজ সমাপ্ত করতে হবে। অনিবার্য কারণে এই মেয়াদে না হলে অতিরিক্ত ৩০ কার্যদিবসে বিচার শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ লিখিতভাবে সুপ্রিমকোর্টকে অবহিত করতে হবে। এ সময়েও না হলে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে বিচারকাজ শেষ করতে হবে। এ মেয়াদ আর কোনোভাবেই বাড়ানো যাবে না। কিন্তু আইনের এই বিধান প্রতিপালন সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়টি লক্ষ্য করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে মাদকের যেসব মামলায় অভিযোগ গঠন হয়েছে, সেগুলোর বিচার ছয় মাসে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্ট বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে সাক্ষী আনলে, বিচারক ও সরকারি কৌঁসুলি আন্তরিক থাকলে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর এক দিনের মধ্যেই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইকোর্টের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে পৃথক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পাশাপাশি বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে।