বিচারে আস্থা ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন বিচারকরা

মানুষের উপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে তাই আস্থা ফেরাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন বিচারকরা। পাশাপাশি এই উদ্যোগ বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাও বাড়াবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি আইনি পরিষেবা পৌঁছে দিতে বিচারকরা পৌঁছে যাচ্ছেন বাড়ির অন্দরে। অ্যাসিড আক্রান্তকে প্রশাসনিক সুবিধা দিতে ছুটে যাচ্ছেন জেলা হাসপাতালে। কখনও আবার রাস্তায় পড়ে থাকা আহত ভবঘুরেকে নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে। শুধু তাই নয়, মাঝ রাতে ফোন পেয়ে একাকী আহত বৃদ্ধাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে গোটা রাজ্য জুড়ে বিচারকরা এই কাজ করে চলেছেন।

নিকট অতীতে এ ভাবে বিচারকরা সরাসরি রাস্তায় নেমে কাজ করেছেন, এমনটা মনে করতে পারছেন না কেউ। বিচারকদের কথায়, মানুষের উপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। তা ফেরানোর পাশাপাশি এই উদ্যোগ বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাও বাড়াবে।

গত ১০ আগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক গৃহবধূকে অ্যাসিড ছোড়ার খবর পান রাজ্য আইনি পরিষেবার কর্তারা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা খবর দেন জেলা পরিষেবার সচিব, বিচারক সেলিম আহমেদ আনসারিকে। এই বিচারকের বাড়ি খড়দহে। শনিবার আদালত বন্ধ থাকায় বাড়িতে ছিলেন তিনি। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তিনি চলে যান বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে অ্যাসিড আক্রান্ত ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করেন। আক্রান্ত মহিলা যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পান, তার প্রাথমিক ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালেই ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র পূরণ করে দেন আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবীরা।

দিন কয়েক আগে বর্ধমান জেলা আইনি পরিষেবার সচিব বিচারককে মাঝ রাতে ফোন করেন এক বৃদ্ধা। ওই বৃদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত এক আইএএস-এর স্ত্রী। স্ত্রীকে একা রেখে বাইরে গিয়েছেন তিনি। রাতে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান ওই বৃদ্ধা। খবর পেয়ে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে মাঝ রাতেই বৃদ্ধার বাড়ি পৌঁছে যান ওই বিচারক। হাসপাতালে নিয়ে যান বৃদ্ধাকে। আপাতত ওই বৃদ্ধা সুস্থ রয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়। গত মাসে বিধাননগরের করুণাময়ীর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যের আইনি কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব দুর্গা খৈতান। তিনি জেলা বিচারকের পদমর্যাদা সম্পন্ন। তিনি দেখেন রাস্তার পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভবঘুরে পড়ে রয়েছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েন ওই বিচারক। খবর দেন জেলার সচিব বিচারক অয়ন মজুমদারকে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই ভবঘুরেকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে বিচারক দুর্গা খৈতান বলেন, ‘মানুষের উপর থেকে মানুষের হারানো আস্থা ফেরানোর কাজ করছি আমরা। নাগরিকদের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেওয়াই মূল লক্ষ্য আমাদের। আমাদের এই মিশন চলবে।’