আইনজীবীর স্বাক্ষর জাল করে রিট প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে তোলপাড়

আইনজীবীর স্বাক্ষর জাল করে হাইকোর্টে সিলেটের সুরমা নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চেয়ে করা রিট আবেদন প্রত্যাহার চাওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে সিলেটে। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালেই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রিট প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়।

উচ্ছেদ চালানোর জন্য গত মে মাসে রিট করেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে নাজিম উদ্দিন নাজিম ও আইনজীবী রাশিদুল হাসান। রায়ের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরুও করে।

তবে নাজিম উদ্দিন নাজিম সম্প্রতি রাশিদুল হাসানকে এড়িয়ে আইনজীবী ইসরাত জাহানের স্বাক্ষর জাল করে হাইকোর্টে রিটটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। পরে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী আইনজীবী ইসরাত জাহান।

তবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে রিটটি করা হলেও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তারা বিষয়টি জানেনই না। নাজিম উদ্দিনকেও তারা চেনেন না। এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক বলেছেন, উচ্ছেদ বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি গ্রুপ তার কাছে তদবিরের জন্য গিয়েছিল। তবে ওই লোকগুলোকে তার ধান্দাবাজ বলেই মনে হয়েছে।

রিট আবেদনে সুরমা নদীর কাজীর বাজার ব্রিজ ও এর আশপাশের বালু উত্তোলন বন্ধ, নদীর তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট বন্ধে আদেশ চাওয়া হয়। রিটে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়। শুনানি শেষে গত ১৪ মে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের আদেশ দেন বিচারপতি নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। পরে গত ৯ জুলাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন। অভিযান এখনও চলমান। কিন্তু গত ২৯ আগস্ট হঠাৎ একই বেঞ্চে আবেদন আসে রিট প্রত্যাহারের।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাহমুদ বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, মানবাধিকার সংগঠনটির সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আমার সঙ্গে কথা বলেন রিটটি প্রত্যাহারের জন্য। আমি তেমন গুরুত্ব দেইনি। পরে আবেদন পেয়ে আমি রিটকারী আইনজীবীর কাছে জানতে চাই জনস্বার্থে করা রিট প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি না। রিটকারীর আইনজীবী ইসরাত জাহান চমকে ওঠেন। আদালতে শুনানির সময় তিনি হাজির হয়ে দেখেন তার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।

ইসরাত জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, শুনানির সময় আমি আদালতকে বলি, আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। পুরো ঘটনা জানার পর আদালত রিটটি আর প্রত্যাহার করেননি। তিনি বলেন, মামলাটি যেহেতু জনস্বার্থে করা হয়েছে এবং এসব মামলায় একজন আবেদনকারী হয় না।

রিটকারী প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দীলিপ কুমার পাল বলেন, এই রিটের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এবং সিলেট বিভাগীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, তারাও চেনেন না নাজিম উদ্দিন নাজিমকে।