১২ কোটি টাকা ফি: আইনজীবীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট
ঊচ্চ আদালত

ভারতের সাথে ফেনী নদীর পানি চুক্তি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ফেনী নদীর পানি চুক্তি ইস্যুতে পানি বন্টণ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা ও স্থগিতাদেশ চেয়ে  হাইকোর্ট বিভাগে এক রীট মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জনস্বার্থে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান। রিট মামলা নং : ১১১৮১/২০১৯ ।

রিটের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করে আইনজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (১) এ প্রদত্ত নির্দেশনা এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বার্থে এই রীট মামলাটি দায়ের করেছি।

রিট আবেদনে, বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি দিতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উক্ত মানবতা মূলক কাজ পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু সমস্যা হলো, উক্ত পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে পানির পাম্প ও সরবরাহ ব্যাবস্থাপনার উপর বাংলাদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা আশব্যক, অন্যথায় চুক্তির ব্যতয় ঘটিয়ে ভারত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে অধিক পরিমাণে পানি নেয়, সেক্ষেত্রে ফেনী নদীর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (এ) এর লঙ্ঘন হবে।

এ ক্ষেত্রে উক্ত রীট মামলায় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ৮ই অক্টোবর ২০১৯ এ প্রকাশিত একটি খবর সংযুক্ত করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তত ৩৪ টি স্থানে পানির পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিউসেক পানি তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে ফেনী নদীর পরিবেশ ইতিমধ্যে চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এবং নদী তীরবর্তী এলাকার বাংলাদেশের লোকজন কৃষিকাজ, মৎসচাষসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখিন হচ্ছে । সামগ্রিক অবস্থার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান ফেনী নদীর পানি চুক্তির প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরা রাজ্যেকে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে যদি পানির পাম্প ও সরবরাহ ব্যাবস্থাপনার উপর বাংলাদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফেনী নদীর পরিবেশের ব্যপক বিপর্যয় ঘটবে এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখিন হবে যা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(এ) সাথে সাংঘর্ষিক হবে ।

উক্ত রীট মামলায় যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাথে যেকোন রাষ্ট্রের কোন চুক্তি যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয় সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণ ক্ষমতা আছে উক্ত চুক্তির উপর হস্তক্ষেপ করার। এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের মামলা, ম্যাটার নং ৩৭১/১৯৮৩ (AIR 1983 Cal 468) কে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত মামলায় দেখা যায় যে, ১৯৭৪ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল সংক্রান্ত আরেকটি চুক্তি হয়। কিন্তু সুগন্দ রায় নামে একজন ভারতীয় নাগরিক উক্ত চুক্তিগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট উক্ত বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তি সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করে উভয় পক্ষের পূর্ণাঙ্গ শুনানি গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সংক্রান্ত ইস্যু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। উক্ত ভারত ও বাংলাদেশ মধ্যকার চুক্তি ইস্যুতে ভারতের হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের হস্তক্ষেপের কারণে কয়েক যুগ পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ছিটমহল চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সুপ্রীমকোর্ট ভারত সরকারকে ছিটমহল বিনিময়ে অনুমোদন দেয় এবং এর মাধ্যমে তারা একটি রেফারেন্স (নজীর) সৃষ্টি করে যে, যেকোন বৈদেশিক চুক্তিতে হাহকোর্টের পূর্ণ ক্ষমতা আছে সেই চুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার যদি তা সংবিধানের সাথে কোনভাবে সাংঘর্ষিক হয়।

ভারতীয় হাহকোর্টগুলো ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রীট ক্ষমতা প্রয়োগ করে। অপরদিকে বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রীট ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

পরিশেষে ভারত ও বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পাদিত ফেনী নদীর পানি চুক্তি ইস্যুতে পানি বন্টণ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এবং মামলা নিষ্পত্তি না হ‌ওয়া পর্যন্ত উক্ত চুক্তির বিষয়ে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়ছে।