স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিচ্ছেন জলদস্যু ও অস্ত্রকারিগরেরা

মহেশখালীতে ১২ বাহিনীর ৯৬ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ

কক্সবাজারের মহেশখালীতে জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগরদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ১২টি বাহিনীর ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্রকারিগর আত্মসমর্পণ করেছেন। একই সঙ্গে তাদের কাছে থাকা ১৫৫টি দৈশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৭৩ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়েছেন।

আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেছেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত আছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে খুন ও ধর্ষণ ছাড়া বাকি সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, সরকারের পক্ষ থেকে সেই সহযোগিতাও করা হবে। অস্ত্রকারিগরেরা ভালো অস্ত্র বানায়। তারা যদি চায় ওয়ার্কশপ দিতে পারে। সেখানেও সরকার সহযোগিতা করবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অতীতে যে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এখন তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। অন্ধকার জগতের এই জীবন কতটা কষ্টের, সেটি তারা টের পেয়েছে। নিজের কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে তারা আত্মসমর্পণ করেছিল।

‘আজকে যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারাও বুঝতে পেরেছে অন্ধকার জগতে জীবন যাপন করা কতটা কষ্টকর। তারা নিজের ভুল বুঝতে পেরে, নিজের ও পরিবারের কষ্টের কথা বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করেছে।’

‘বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই দেশকে দস্যু, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। এই এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। সাবরাংকে পর্যটনের জন্য বিশেষ জোন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিন লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, দেশকে দস্যু, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করতে কাজ করছে এ সরকার।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর মানিক, আয়াতুল্লাহ, আবদুস শুকুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫, চেয়ারম্যান তারেক শরীফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুল, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন, মহেশখালীর নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫ জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজ-উদ-দৌলাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশিখালীর কালু বাহিনীর প্রধান কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫-২০ জন জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর রয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন আরও জানান, আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা দীর্ঘদিন জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মাছ লুট, ঘের ডাকাতি, বংশ পরস্পরের বিরোধ নিয়ে খুনোখুনি ছিল নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। এতে স্থানীয়রা থাকতো আতঙ্কে।

আত্মসমর্পণে আগ্রহী অনেক দস্যু ও অস্ত্র কারিগর জানিয়েছে, অর্থের লোভে এ অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়েন। আবার কেউ প্রভাবশালীদের ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার হয়েছেন। অনেকে আবার বংশ পরম্পরায় আধিপত্য রক্ষায় এ কলঙ্কিত জগত বেছে নিয়েছিলেন। এ জগতে পা বাড়িয়ে অনেক পথ হেঁটেছেন। একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর র‌্যাবের মাধ্যমে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের পরও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অনেক শীর্ষ দস্যু ও অস্ত্র কারিগর। যার কারণে বিভিন্ন পাহাড় ও সাগর উপকূলে অভিযান বৃদ্ধি করে পুলিশ। অভিযানের মুখে আবারও আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার দস্যু ও অস্ত্র কারিগর।