অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া

‘নির্বাচিত হলে টাউট-দালাল মুক্ত আইনাঙ্গন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকব’

অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কুমিল্লা আইন কলেজ থেকে স্মাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ২০০৮ সালে সনদ লাভ করার মাধ্যমে আইনপেশায় পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে হাইকোর্টে বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে জানতে মুখোমুখি হয়েছেন ল’ইয়ারস ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিম।

একান্ত সাক্ষাৎকারের শুরুতেই আইন বিষয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা কি, কবে এবং কেন এই পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আইনজীবী পেশাটা অনেক মর্যাদাপূর্ণ। এই পেশায় কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। যেমন মানবাধিকারের বিষয় সমূহ অথবা কোন বিচারপ্রার্থীকে বিনা ফি তে  বিচার পাইয়ে দেওয়া এই সকল জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে এখানে নিজের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব। তাই এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করা।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ আপনি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী, কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচন কেন নয়?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: রাজনৈতিক লেজুরভিত্তির প্রথাটাকে আমি বরাবরই ঘৃণা করি। কেননা এটা অনেকটা দাসত্বের মতো, স্বাধীন পেশাজীবীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়। তাই আমি কোন রাজনৈতিক ব্যানারে নির্বাচন করছি না ভবিষ্যতেও কখনো করবোনা। তাছাড়া আমি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে নয় বরং একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থী হিসাবে আসন্ন নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদে পদপ্রার্থী হয়েছি। স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন স্বতন্ত্র মানে ভিন্নতা আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থী হচ্ছে স্বাধীনপ্রার্থী। সুতরাং আমি একজন স্বাধীনপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আপনার বিশেষ পরিকল্পনা কি কি?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: আমার মুখ্য নির্বাচনী ইশতেহার হল টাউট, দালাল কিংবা মিডেল ম্যান অথবা কোন ক্লার্ক যেন মামলা রিসিভ করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রাণপণ সংগ্রাম ও চেষ্টা চালাবো। এছাড়াও আইনাঙ্গনে দুর্নীতি, বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্যও চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক, আপনিতো জনস্বার্থে মামলা করে থাকেন? জনস্বার্থে মামলা কেন করেন?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: আমি শুধু একজন আইনজীবীই নয় একজন নাগরিকও বটে। সে জায়গা থেকে সমাজের প্রতি আমার অগাধ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তার ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে জনস্বার্থে মামলা করে থাকি। কেননা জনস্বার্থের মামলায় অনেকেই লাভবান হন যা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সফলতা।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ আইনাঙ্গনে “টাউট-দালাল-দুর্নীতি নির্মূল আন্দোলন” আহ্বায়ক আপনি, যে উদ্দেশ্যে সংগঠনটি গঠিত হয়েছে তার বাস্তবায়ন কতটুকু?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ভালো কাজে বাঁধা আসবেই, তাই বলে আমরা দমে না গিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সংগঠনে ৯১ জন সক্রিয় মেম্বার সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরে কাজ করে যাচ্ছে।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ সম্প্রতি টাউট, দালাল ও ভুয়া আইনজীবী মুক্ত আদালত অঙ্গন চেয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছেন, বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: আমি এই বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশানে একটা রিট পিটিশান দায়ের করেছি। হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত শুনানি শেষে রুল ইস্যু করেন যে, বার কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা? এবং এই মর্মে আদালত আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আবেদনটি কার্যকর করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে ন্যায়ালয়ে টাউট-দালাল ও ভুয়া আইনজীবী ঠাই পায় কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক অসাধু আইনজীবীদের মাধ্যমে, তারা আদালত অঙ্গনে এদের প্রশ্রয় দেয়। সে ব্যাপারেও আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি। তবে ঐ সকল অসাধু আইনজীবীদের সংখ্যা অতি নগণ্য।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ স্বাধীন প্রসিকিউশন ও দেশের সব আদালতে ই-জুড়িশিয়ার আওতায় আনতে এবং ই-কোর্ট স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে আরও দুইটি পৃথক রিট মামলার বাদী ও আইনজীবী আপনি, স্বাধীন প্রসিকিউশন ও ডিজিটাল আদালত ব্যবস্থার সুফল কি এবং কারা উপকৃত হবেন?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: সরকারী ভাবে উকিল নিয়োগের ব্যাপারটি স্বচ্ছ নয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত। আদালতকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি এটা একটি ক্রুটিপূর্ণ নিয়োগ পদ্ধতি। যার কারণে প্রসিকিউশন হেরে যাচ্ছে যোগ্য আইন কর্মকর্তার অভাবে। যদি স্বাধীন প্রসিকিউশন সিস্টেম গঠন করা হয় তাহলে  রাজনৈতিকভাবে নয় বরং মেধার ভিত্তিতে সরকারি ল’ অফিসার নিয়োগ করা সম্ভব হবে। আর অন্যদিকে ই-কোর্ট হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার ডিজিটাল পদ্ধতি। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই। এতে করে মামলা জট একদমই থাকবে না। আইনজীবীরা চেম্বারে বসেই মামলা ফাইল করতে পারবেন। ইতিমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশান রুল দিয়েছেন নব্বই দিনের মধ্যে এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ জনস্বার্থে দায়েরকৃত আপনার আরেকটি মামলায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশনা চেয়েছেন, হঠাৎ সাইকোলজিস্ট নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন কেন?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক অবক্ষয়, একে অপরকে নির্মমভাবে নির্যাতনসহ নানামুখী অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। একজন ছাত্রী আত্মহত্যা করে এবং তার আত্মহত্যার পিছনে কোন ছাত্র জড়িত থাকে তখন সেখানে একটা আবেগের বিস্ফোরণ হয়। তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে নানামুখী সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। এই সমস্যাগুলোর কথা তারা কারো কাছে বলতে পারে না। বাবা মায়ের কাছে বলতে সংকোচবোধ করবে, বন্ধুদের কাছে বললে তারা ব্যাপারটা নিয়ে হাসি-তামাশা করবে। এই রকম অনেক বিষয় রয়েছে তা যদি তাৎক্ষনিক কোন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে সমস্যাটা শেয়ার করা যায় তবে উক্ত সাইকোলজিস্ট ঐ শিক্ষার্থীকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে লাইনচ্যুত হওয়া থেকে উদ্ধার করে আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবেন। এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে এবং সু-শিক্ষার প্রসার হবে।

ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ আইনজীবীদের সমাজের প্রকৌশলী বলা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আইনজীবীদের ভূমিকা কি হতে পারে?

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: আইনজীবীদের হওয়া উচিত সমাজের রোল মডেল। আইনজীবীদের দেখে মানুষ ভয় না পেয়ে বরং তাদের শ্রদ্ধা ভক্তি করে যেন আইনজীবীদের কাছে এই বিশ্বাস নিয়ে আছে যে এখানে একটা সঠিক ও ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে।

 ল’ইয়ার্স ক্লাবঃ  আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

অ্যাডভোকেট ফরহাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।