সুপ্রিম বার নির্বাচনে মনোনীত দুই সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্‌ মঞ্জুরুল হক এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

আইনজীবীদের কল্যাণে সুপ্রিম বারের সম্পাদক প্রার্থীরা যা ভাবছেন

আজ বাদে কাল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। দু’দিনব্যাপী এ নির্বাচনে ১১ ও ১২ মার্চ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এর মধ্যে দুপুর ১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বিরতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গণ। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। শেষ মুহূর্তে এসে প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীগণ। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোটের জন্য। প্রার্থীদের প্রচারণায় প্রাধান্য পাচ্ছে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে নিজেদের পরিকল্পনা আর নির্বাচিত হলে সেসব বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি।

এবারের নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদে মোট ৩১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনীত সাদা প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট শাহ্‌ মঞ্জুরুল হক। অপরদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অর্থাৎ বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়েছে। আসন্ন সুপ্রিম বার নির্বাচনে মনোনীত দুই সম্পাদক প্রার্থী আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে কি ভবছেন, সেসব বিষয়ে নজর রেখেছে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম।

সম্পাদক নির্বাচিত হলে অ্যাডভোকেট শাহ্‌ মঞ্জুরুল হকের প্রতিশ্রুত পরিকল্পনাসমূহ নিম্নরূপ-

ই-জুডিশিয়ারি: উন্নত বিশ্বের বিচার ব্যবস্থার আলোকে ইলেক্ট্রনিক/ডিজিটালাইসড ফাইলিং ও ফাইল ব্যবস্থাপনা এবং  আদালতের আদেশসমূহ দ্রুত জারিকরণের ব্যবস্থা অর্থাৎ ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

কিউবিকেলস বরাদ্দ: আইনজীবীদের কিউবিকেলস (বসার জায়গা) বরাদ্দে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

নামাজের স্থান ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য করণীয়: আইনজীবীদের নামাজের জন্য নির্ধারিত মসজিদ ও নামাজের স্থানসমূহের বিদ্যামান সমস্যা নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে সমিতির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

অডিটোরিয়াম আধুনিকায়ন: সুপ্রিম কোর্ট বারের উদ্যোগে বিদ্যমান অডিটোরিয়ামের আধুনিকায়ন এবং প্রয়োজনে বৃহৎ পরিসরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অডিটোরিয়াম স্থাপন করা হবে।

১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্লিনিক ও হেলথ কার্ড: আইনজীবীদের জরুরী চিকিৎসা সেবায় সার্বক্ষণিক একাধিক এমবিবিএস ডাক্তার ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবক/সেবিকাসহ ১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা উদ্যোগ গ্রহণ, অসহায় ও অসুস্থ আইনজীবীদের জন্য বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সম্মানজনক আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বিশেষায়িত হাসপাতালের ‘প্রিভিলেজড হেলথ কার্ড’ চালু করা হবে।

ইয়ার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা: এছাড়া আইনজীবীদের জন্য বৃহৎ পরিসরে সকল অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট ও সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ল’ইয়ার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আইনজীবী আবাসন প্রকল্প: আইনজীবীদের অন্যান্য কল্যাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, সমিতির উদ্যোগে আইনজীবীদের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবাসন প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন সরকারি আবাসন প্রকল্পে আইনজীবীদের কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও বৃদ্ধিকরণে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।

আইনজীবী বান্ধব বেঞ্চ:  প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইনজীবী বান্ধব বেঞ্চ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আদালতে আইনজীবীদের হয়রানি বন্ধের নিমিত্তে ও সকল প্রকার দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করবেন। আদালতের কার্যক্রমে গতি বাড়ানোসহ টাউট-দালাল মুক্ত আদালত প্রাঙ্গণ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ইন্টারনেট, সিসি ক্যামেরা ও অগ্নি-নির্বাপণ: সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে উচ্চগতি সম্পন্ন ওয়াইফাই (WiFi) স্থাপনের মাধ্যমে অত্যাধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, সমগ্র এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা করা হবে।

বৃহৎ পরিসরে ফুড কোর্ট ও খাবারের মানোন্নয়ন: আইনজীবীদের পরামর্শক্রমে বিদ্যমান ক্যান্টিন সম্প্রসারণ, ক্যান্টিন ও ফুড কোর্টের উন্নত পরিবেশ এবং লাউঞ্জে খাবারের মান উন্নতকরণসহ বৃহৎ পরিসরে ফুড কোর্ট স্থাপনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

নারী আইনজীবীদের যাতায়াতে পৃথক বাস সার্ভিস: আইনজীবীদের যাতায়াতের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিবহনের ব্যবস্থা এবং নারী আইনজীবীদের জন্য পৃথক বাস সার্ভিস চালু করা হবে।

পেশাগত মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ: আইনজীবী, বিশেষ করে তরুণ আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য অ্যাডভোকেসি/ড্রাফটিং/লিগ্যাল রিসার্চ বিষয়ক অংশগ্রহণমূলক লেকচার সিরিজের আয়োজনে বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির সাথে সমন্বয় পূর্বক কার্যকর ব্যবস্থার গ্রহণ করার পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের আইন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য বিচারকদের মতো ছোট ছোট গ্রুপে আইনজীবীদেরকে বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হবে।

কমনরুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ডে-কেয়ার: নারী আইনজীবীদের জন্য কমনরুমের আয়তন বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত টয়লেট, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, ডে-কেয়ার সেন্টারের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নসহ যুগোপযোগী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

আধুনিক পার্কিং: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ, পর্যাপ্ত ও উন্নতমানের টয়লেট স্থাপন ও বিদ্যমান টয়লেটের আধুনিকায়ন করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনের অব্যবহৃত স্থানগুলো ব্যবহার উপযোগী করা এবং আইনজীবীদের গাড়ি রাখার জন্য আধুনিক পার্কিং স্থাপন করা হবে।

রেজিস্ট্রেশন প্রথা বাতিল:  সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ এবং ‘লিগ্যাল এইড দিবস’ –এর অনুষ্ঠানে ও অন্যান্য বিশেষ আয়োজনে রেজিস্ট্রেশন প্রথা বাতিল করে সকল আইনজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

বেনভোলেন্ট ফান্ড: বেনভোলেন্ট ফান্ডে আর্থিক সুবিধার পরিমাণ সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি করা এবং জীবিত অবস্থাতেই যাতে আইনজীবীরা উক্ত আর্থিক সুবিধার অন্তত ৫০ ভাগ উত্তোলন করতে পারেন সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওকালতনামা ক্রয়কারী আইনজীবীর নিজস্ব ফান্ডে ওকালতনামার ২০ শতাংশ টাকা ডিপোজিট রেখে বছর শেষে প্রদানের উদ্যাগ গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে সম্পাদক নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে রয়েছে-

  • বিদ্যমান বেনভোলেন্ট ফান্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবদ্দশায় আইনজীবী নিজের কিংবা পরিবারের প্রয়োজনে যেন উক্ত ফান্ডের কিছু অংশ ভোগ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে
  • আইনজীবীদের জন্য জরুরী মেডিক্যাল ফান্ড করা হবে, যাতে করে অসুস্থ হলে আইনজীবীরা উক্ত ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন।
  • আইনজীবীদের কিউবিকেলস সমস্যা সমাধানে নীতিমালা প্রণয়ন করে নীতিমালার আলোকে নবীন ও প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যে আসন বণ্টন করা হবে।
  • আইনজীবীদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির নিমিত্তে কাজ করা।
  • নারী আইনজীবীদের জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল, এজন্য মহিলা কমনরুম গুলো আরও সুসজ্জিত করা, টয়লেটসমূহ আরও উন্নত করা।
  • বিদ্যমান মসজিদ সম্প্রসারণ করাসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যেসব অনুষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টে অনুষ্ঠিত হয় সেসব অনুষ্ঠানসমূহ বিশেষভাবে আয়োজনে সমিতির পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ করা।
  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নাজুক ইন্টারনেট ব্যবস্থা উন্নয়নে শক্তিশালী ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। যাতে করে সকল আইনজীবী সহজে ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
  • বিদ্যামান লাইব্রেরীকে আধুনিক করা হবে। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ই-লাইব্রেরীতে উন্নীত করা হবে।
  • সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি আইনজীবী সমিতি ভবনের প্রবেশদ্বারে ব্যানার-ফেস্টুন ব্যবহার যেন সৌন্দর্য্য নষ্ট না করা হয় সেজন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হবে।