জীবন্নাহার

স্বামীকে হত্যার পর লাশ ৬ টুকরা করে লুকানো নারীর জামিন মেলেনি

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বামীকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে খুনের পর মরদেহ ওয়্যারড্রবে রাখার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সেই স্ত্রী জীবন্নাহারের হাইকোর্টে জামিন মেলেনি।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তার আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ তাফসিরুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।

পরে ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলার চালায় জীবন্নাহার নামে এক নারী তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। প্রথমে তার স্বামীকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যা করার পর মরদেহ ঢুকিয়ে রাখা হয় ওয়ারড্রবে।

পরেরদিন মরদেহ বের করে দুই পা, দুই হাত কাটে এবং মাথা কেটে আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেন। এ মামলায় জীবন্নাহারকে হাইকোর্ট জামিন দেননি।

ঘটনার পর ২৬ জানুয়ারি দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী জীবন্নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে খুনের বর্ণনা দেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁনমিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়।

তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রোজা বেশিরভাগ সময়ই তার নানির বাড়ি থাকতো। ঘটনার দিন রোজা বাসায় ছিল না।

চাকরির সুবাদে স্বামী রফিকুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির মেঘনা কারখানার সীমানাপ্রাচীরের পাশে গিলার চালা এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং স্ত্রী স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদে চাকরি করেন।

স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর স্ত্রী বেতন পেতেন ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় স্বামী তার স্ত্রীর বেতনের টাকা তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা তার কাছে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী জীবন্নাহার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

গত বছরের ২৪ জানুয়ারি সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগে স্ত্রী জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে খাট থেকে নিচে পড়ে যান। পরে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়ারড্রবে মরদেহটি লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান।

পরে কারখানা থেকে রাতে বাসায় ফিরে মরদেহটি বের করে বটি দিয়ে দুই হাত কনুই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশঝাড়ে, পা দু’টি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেন। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেন এবং স্ত্রী জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন।

শ্রীপুর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে রফিকুলের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আটক জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।