অ্যাডভোকেট কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজাওয়ার হোসেন মারা গেছেন

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে এগারোটায় খিলগাঁও নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন।  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জগলুল কবির ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সাজাওয়ার হোসেন গত ৫/৬ দিন জ্বরে ভুগছিলেন। করোনা টেস্টের জন্য দিয়েছিলেন হাতে পাওয়া হয়নি। এছাড়া ওনার ইউরিন সমস্যা ছিল। মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিল ৭৪ বৎসর।

আজ এশার নামাজের পর মরহুমের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলাধীন আড়াইহাজারে জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

কাজী মোঃ সাজাওয়ার হোসেন ১৯৪৬ সনের ২৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন রূপসী গ্রামে নানার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারী চাকুরীজীবী মরহুম কাজী আবদুস সালাম ও মাতা মরহুম জাহানারা বেগম । ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। নিজ পৈত্রিক বাড়ি একই জেলার আড়াইহাজার থানাধীন আড়াইহাজার ইউনিয়নের কামরানীরচর গ্রামে শৈশবে বড় হয়েছেন। তিনি দাদা মরহুম কাজী বসির উদ্দিনের সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কামরানীরচর প্রি প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। পাঁচগাঁও বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ’৬৩ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে এস.এস.সি পাশ করেন। ম্যাট্রিকুলেশন পদ্ধতি থেকে এস.এস.সি প্রথম ব্যাচে পাশ করেন।

জগন্নাথ কলেজ থেকে ’৬৫ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞানে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৬৭ সনে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৬৭-৬৯ বর্ষের, ৬৯ সনের পরীক্ষার্থী হয়ে ’৭০ সনে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬৮-৭০ সনের বর্ষে ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৭-৬৯ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।

বার কাউন্সিল থেকে ১ ফেব্রুয়ারী ’৭১ সনে আইনপেশা পরিচালনার সনদ নিয়ে এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করেন। ’৭২ সনের প্রথম দিকে তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কলেজ নতুন জায়গায় স্থানান্তরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করেন এবং একই সাথে আইনপেশার পাশাপশি সকালে ও রাতে ক্লাশ নেওয়ার শর্তে প্রভাষক হিসাবে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর তিনি অধ্যাপনার কাজ করেন।

১৯৭৮ সনের ২৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনপেশা পরিচালনা অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে ’৮৯ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করেন। ২০১০ সনের ২৩ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আ্যপিলেট ডিভিশনে আইনপেশা পরিচালনার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হন।

কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন ১৯৯৬-৯৭ সনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ও ২০০৯-১০ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওযামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য।

তিনি কলেজে পড়াকালীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যে অণুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ’৬৬ সনে ৬ দফা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ’৬৮ সনে ছাত্রলীগের ঢাকা শহর উত্তরের সভাপতি ছিলেন এবং সাথে সাথে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উত্তরের সভাপতি ছিলেন ও মরহুম জননেতা আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহম্মেদের সাথে কাজ করেছেন। ’৬৯ সনে ছাত্র গণঅভ্যূথানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন একপুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার পুত্র মোঃ তৌফিক সাজাওয়ার পার্থ বাংলাদেশের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর কন্যা এডভোকেট ফারিয়া সাজাওয়ার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন সারাজীবন বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংগঠন করেন। তিনি বৃহত্তর ঢাকা আইনজীবী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ছিলেন। বৃহত্তর ঢাকা কল্যাণ সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ও গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির আজীবন সদস্য। গ্রেটার ঢাকা রোটারী ইন্টারন্যাশানালের সভাপতি ছিলেন। ব্লাস্ট ঢাকা ইউনিটের তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন।