কারাদণ্ডের বদলে ৬ মাস বিনা বেতনে গান শেখানোর 'সাজা'
আদালত (প্রতীকী ছবি)

বিচারকের সক্রিয় প্রচেষ্টায় ৩০ বছরের পুরাতন বিরোধ ৩ দিনেই নিষ্পত্তি!

৩০ বছরের পুরাতন বিরোধ। বাদীর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে বিবাদী কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আইনের ফাঁকফোকর এবং বিভিন্ন উপায়ে বাদীকে প্রায় ৩০ বছর আদালতে ঘুরিয়েছেন বিবাদী। একপর্যায়ে এসে বিবাদী নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেও সরে যান। হয়তো পরিকল্পনা ছিল একতরফা রায় হলে ছানি বা আপিল করে মামলা আরো বিলম্বিত করবেন।

ঈশ্বরদী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক এস, এম, শরিয়ত উল্লাহ্ যোগদানের পর পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। সংক্ষিপ্ত কয়েকটি তারিখ দিয়ে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। চূড়ান্ত রায়ে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বেদখলকৃত জমিতে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করে ডিক্রিদারকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বিবাদীর প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

৩০ বছর বাদীকে আদালতের বারান্দায় ঘুরিয়ে যাওয়া বিবাদী স্বভাবতই এই আদেশ প্রতিপালন করেনি। ফলাফল জারি মামলা। আদালত অন্যান্য জারি মামলার মতো এই জারি মামলাটিও দ্রুত নিষ্পত্তি করে আদালতযোগে বাদীকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের জারিকারক এবং ঢুলি দখল বুঝিয়ে দিতে গেলে বিবাদীরা বাধা প্রদান করেন। বিধায়, আদালতযোগে দখল প্রদানের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করে জারিকারক আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।

এবার বিবাদীরা জারি কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে আদালতের শরনাপন্ন হন। মূল মামলার ডিক্রি রদ চেয়ে ছানি মামলা করেন। পাশাপাশি ছানি মামলা চলাকালীন সময়ে জারি মামলা স্থগিত রাখার জন্য জারি মামলায় পৃথক আরেকটি প্রার্থনা করেন। আদালত গুণাগুণের ভিত্তিতে সকল দরখাস্ত নামঞ্জুর করেন এবং জারি কার্যক্রম চলবে মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। একই সাথে আদালত জারিকারকের প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আদালতের কাজে বাধা প্রদানকারীদের নাম, ঠিকানা দাখিলের নির্দেশ প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট জারিকারক অভিযুক্তদের নামের তালিকা আদালতে দাখিল করেন। আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উক্ত কাজ সুস্পষ্টভাবে আদালতের কাজে বাধা প্রদান এবং দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরাসহ আদালতের কাজে বাধা প্রদানের সাথে আর কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতে মামলা দায়েরের নির্দেশ প্রদান করেন। সে অনুযায়ী আদালতের পক্ষ হতে পাবনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।

এই আদেশের ৩ কার্য দিবসের মধ্যে বিবাদীরা বেদখলকৃত জমিতে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু করেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে অগ্রগতি উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ বিলম্ব হলেও অবশেষে আদালতের সক্রিয় প্রচেষ্টায় বাদীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

:ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম বিশেষ সংবাদ