সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপির দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ, কুশপুত্তলিকা দাহ

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল লতিফের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আইনজীবীরা। এ সময় পিপির কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

আজ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে জজ কোর্টের শহীদ মিনার পাদদেশে এ বিক্ষোভ ও কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

এসময় বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান জজ কোর্টের পিপি আব্দুল লতিফ পিপিশিপ দেওয়ার নাম করে ১৫ জন আইনজীবীর থেকে মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। পিপিশিপ দেওয়ার নাম করে অহেতুক কালক্ষেপণ করায় টাকা ফেরত চাইলে তাদের হেঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি মামলা পরিচালনার সময় আসামিপক্ষের থেকে ঘুষ নিয়ে থাকেন।’

তারা আরও বলেন, ‘আব্দুল লতিফ বিডিআর-এ চাকরি করাকালে দুর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত হন। তিনি বিডিআর-এ চাকরির যে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন তাও যথাযথ নয়। ওই সনদ যাচাইয়ের জন্য কয়েকজন আইনজীবী আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।’

বক্তারা বলেন, ‘২০০২ সালে কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জিল্লুর রহমান আসামিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তৎকালীন পিপি ওসমান গণি তাকে বহিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু আব্দুল লতিফ তাকে পিপিশিপ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।’

‘এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে বহু নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া, ঘুষ-দুর্নীতির বিনিময়ে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী আইনজীবীদের পিপিশিপ দিয়েছেন। এসব নিয়ে আইনজীবীরা প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিলে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

বক্তাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর খাটাল ব্যবসার সঙ্গে সোনা ও মাদক পাচার করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন আব্দুল লতিফ। প্রতিবাদ করায় তার নিজ গ্রাম দক্ষিণ কামারবায়সাসহ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জামায়াত শিবির বানিয়ে তিনি ও তার ছেলে রাসেল ২০১৪ সালে ৬০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দক্ষিণ কামারবায়সা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিজের ভাই আব্দুল আহাদসহ স্বজনদের মারধর করে। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাসেলকে সভাপতি বানিয়েছেন।

এছাড়াও অতিরিক্ত পিপি থাকাকালে তিনি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় আসামিদের থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন।

এদিকে, লতিফের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় গ্রামের পাঁচজনের গরু ধরে এনে জবাই করে উল্লাস করে লোকজনদের মাঝে বিতরণ করেছে তার ছেলে রাসেল। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঝাউডাঙা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিএনপি নেতা খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশ করে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবির কথা বলে কলেজ জাতীয়করণ ও শিক্ষক- কর্মচারিদের এমপিওভুক্তির নামে দুই কোটি টাকা তুলেছেন লতিফ ও তার ছেলে ঝাউডাঙা কলেজের শিক্ষক রাসেল।

এসময় আব্দুল লতিফ অবিলম্বে পিপিশিপ থেকে পদত্যাগ না করলে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার না করলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ অনশন কর্মসূচিসহ বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে জানান বক্তারা।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং সাবেক অতিরিক্ত পিপি আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- সাবেক পিপি ওসমান গণি, অ্যাডভোকেট সঞ্জয় রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহেদুজ্জামান সাহেদ, সাবেক অতিরিক্ত জিপি নওশেল আলী প্রমুখ। সূত্র- ঢাকাটাইমস