গার্ড অব অনার ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও
সুপ্রিম কোর্ট

ব্যারিস্টার জুম্মানের আইনজীবী সনদ বৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও উচ্চ আদালতের এক বিচারকের ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বার কাউন্সিলের গেজেটের বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার (১১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে করা জরিমানার আদেশও স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অনিক আর হক প্রমুখ। আর জুম্মান সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম. আমীর উল উসলাম ও তানিয়া আমীর।

আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার কাজল বলেন, দেশে অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তি একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডে প্র্যাকটিস করার জন্য কোন ব্যক্তিকে ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সনদ প্রদান করা সমীচীন হয়নি।

তিনি বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে মূল আপিল দায়ের করার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।

এর আগে, সোমবার (৯ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন দায়ের করা হয়। আবেদনে জুম্মানকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশের বৈধতা ও দুই আইনজীবীর জরিমানা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাওয়া হয়।

গত ৮ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল খারিজ করেন হাইকোর্ট।

এছাড়াও এ মামলার দুই রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দেন আদালত। তাদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

আদালত তার রায়ে বলেন, এই ধরনের রিট দায়ের করার জন্য রিটকারীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণে জরিমানার আদেশ হওয়া উচিত। কিন্তু তাদের (দুই রিটকারী) বয়স ও প্র্যাকটিসের টোকেন (জরিমানা) স্বরূপ ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হলো।

জুম্মানের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে জুম্মানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তানিয়া আমীর।

এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর বিচারপতি তারিক উল হাকিম আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং কয়েকদিন দায়িত্বপালন শেষে অবসরে যান।

পরবর্তীতে রিট আবেদনটির ওপর জারি করা রুল বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

গত ২১ ও ২৮ নভেম্বর এবং গত ১১ ও ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের মোট চারটি বেঞ্চ ওই রিট শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি তারিক উল হাকিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বিভাগ রিটটি শুনতে সম্মতি প্রকাশ করেন।

গত ২১ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ গত ১৯ সেপ্টেম্বর জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

তাই রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকী সহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।