নাটোরে নদী থেকে বালু উত্তোলন, সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
আদালত

দলিলকে ‘কাগুজে’ দাবি করে ক্রেতার স্বত্ব অস্বীকার: ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ

স্ত্রীকে দানদলিলমূলে সম্পত্তি দিয়েছিলেন স্বামী। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে যোগসাজশ করে সেই দানদলিলটি আদালতযোগে বাতিল করেন তারা। এদিকে দলিল বাতিলের আগেই স্ত্রী ওই দানদলিলে প্রাপ্ত সম্পত্তি একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। দানদলিলটি বাতিলের পর স্বামী-স্ত্রী সেই ক্রেতার সব স্বত্বদখল অস্বীকার করলে নিরুপায় ক্রেতা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। অবশেষে আদালত বাদীর পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং বাদীকে হয়রানি করার জন্য বিবাদীর ওপর ২০,০০০ টাকা খরচারোপ করেছেন।

রাজশাহীর বাগমারা সহকারী জজ আদালতের বিচারক মারুফ আল্লাম বুধবার (৯ ডিসেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ১৯৭৩ সালে রহিমা-আসকান দম্পতি যৌথভাবে একটি পুকুরের অর্ধেক (১.২৪ একর) ক্রয় করেন, যে-পুকুরে রহিমার অংশ ছিল ৬২ শতক আর আসকানের অংশ ছিল ৬২ শতক। ১৯৭৭ সনে স্বামী আসকান তার অংশের ৬২ শতক স্ত্রী রহিমাকে দলিলমূলে দান করে দেন। ফলে ওই পুকুরে রহিমার অংশ দাঁড়ায় ১.২৪ একরে। ১৯৮১ সনে রহিমা তার অংশ থেকে ৬২ শতক সম্পত্তি বাদী সাদেকের কাছে বিক্রি করে দেন। সাদেক অন্য শরিকদের সঙ্গে যৌথভাবে লিজ দিয়ে পুকুরটি ভোগদখল করছিলেন। এর কিছুদিন পর সাদেক জানতে পারেন, রহিমাসহ পুকরের অন্য শরিকরা ভিন্ন ব্যক্তির কাছে পুকুরটি লিজ দিয়েছে এবং সাদেককে সেই লিজ চুক্তির পক্ষ করা হয়নি। লিজের অর্থ সাদেক না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।

মামলায় বিবাদী রহিমা জানান, সাদেকের কাছে তিনি জমি বিক্রি করলেও ওই বিক্রয় দলিলমূলে তিনি সাদেককে জমির দখল বুঝিয়ে দেননি। তিনি সাদেককে একটি কাগুজে দলিল করে দিয়েছিলেন।

রহিমা আরও জানান, তিনি ওই পুকুরে ১.২৪ একরের মালিক ছিলেন বটে; কিন্তু এরমধ্যে ৬২ শতক সম্পত্তি তিনি তার স্বামীকে ৭৩ সালের এক দলিলের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছেন। আর তার স্বামী ১৯৭৭ সনে যে দলিলের মাধ্যমে তাকে ৬২ শতক জমি দিয়েছিলেন, সেই দলিলটি ২০০৪ সালে এক মামলায় তারা স্বামী-স্ত্রী আপসমূলে বাতিল করে নিয়েছেন। ফলে বাদী সাদেকের বায়া দলিলটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় নালিশি পুকুরে সাদেকের স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ শেষে এই মামলায় বুধবার আদালত বাদীর পক্ষে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়েছে, বিবাদীর দাবি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। আসকান তার স্ত্রী রহিমাকে যে দানদলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি দান করেছিলেন, পরবর্তীতে সেই দানদলিলটি আর বাতিলযোগ্য নয় বলে আদালত অভিমত দেন। দানদলিলটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল এবং ওই দানদলিলের ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পত্তি স্ত্রী রহিমা আগেই বাদীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে এধরনের দানদলিল আইনত বাতিল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দানদলিলের সম্পত্তি ইতোমধ্যে গ্রহীতা কর্তৃক বিক্রি হয়ে গেছে, সেই দানদলিল বাতিল করার কোনো সুযোগ আইনত নেই বলে আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন।

একইসঙ্গে বাদীকে হয়রানি করার জন্য বিবাদী রহিমার ওপর বিশ হাজার টাকা খরচারোপ করেন আদালত। এই অর্থ বাদী প্রাপ্ত হবেন বলে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।