মামলা জেতাতে জমি দাবি, আইনজীবী বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগ

মামলা জিতিয়ে দেয়ার বদলে জমি দাবি করার অভিযোগ উঠেছে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী হলেন- সুলতান আলী খন্দকার ও সামছুল আলম। অন্যরা যাতে এরকম আইনজীবী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব কিছুর প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সৈয়দ খন্দকার, রিন্টু খন্দকার, হাজেরা বেগম, জোসনা বেগম প্রমুখ।

‘অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেছেন- আমি রুলিং পার্টির তিন বারের জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট। এত বড় সাহস আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে দরখাস্ত দেয় আবার সংবাদ সম্মেলনের কথা বলে। আমি দেখে নেব। মোটা টাকায় মানহানি মামলা করবো’- এমন ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন তারা।

সুলতান আলী খন্দকার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, কুড়িগ্রাম মৌজার দাগের পাঁচ একের ৬০ শতক করে তিন শরিকের জমি নিয়ে গণপূর্ত অফিসের ইমারত বিভাগের সঙ্গে মামলায় তাদের আইনজীবি ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। এই মামলাটি চলমান না থাকায় মামলাটি খারিজ হয়।

যেহেতু এই মামলায় আমাদের পূর্ববর্তী শরিকগন সুবাস বোসকে আইনজীবি হিসেবে রেখেছিলেন। সেহেতু পরবর্তীতে আমরাও স্বত্তের মোকদ্দমা করার জন্য ১৯৯৯ সালে অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসকে আইনজীবী হিসেবে থাকার জন্য অনুরোধ করি এবং ফাইলপত্র দিয়ে আসি।

তিনি (সুবাস বোস) আমাদের ২-৩ মাস ধরে ঘুরাতে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে থাকেন নাই। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলামকে আইনজীবী নিয়োগ করে স্বত্তের মোকদ্দমা করি। যার মামলা নং- ৮০/৯৯।

এই মামলায় রায় আমাদের পক্ষে আসে অর্থাৎ আমরা ডিগ্রি প্রাপ্ত হই। তখন অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ‘এই জমির অনেক মূল্য প্রশাসনের নজরে আছে। এভাবে সহজে তোমরা জমি পাবানা। যদি উক্ত জমির এক তৃতীয়াংশ ছেড়ে দেও তাহলে আমি চেষ্টা করে তোমাদের পক্ষে পাওয়ায় দেব’। তবে আমরা জমি দিতে রাজি হইনি।

এরপর গণপূর্ত অফিসের ইমারত বিভাগ উচ্চ আদালতে (১৪৫/২০০১ নং) আপিল করে। তখন এক-তৃতীয়াংশ জমি না দেওয়ার কারণে অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস উক্ত মামলায় আমাদের পক্ষের আইনজীবী না হয়ে বিপক্ষের আইনজীবী হন। এবং আপিল করায় উক্ত জমির বিষয়ে রিমান্ড হিসাবে নিম্ন কোর্টে (সিনিয়র এ্যাসিস্ট্যান্ট জর্জকোর্ট, মামলা নং ১৬৫/২০১৬) পূনর্বিবেচনায় যায়।

সুবাস বোস আমাদের পক্ষের আইনজীবী থাকাকালে মামলার খুটিনাটি, গোপন তথ্য, জরুরি কাগজ তার কাছে ছিল। বিধায় সকল গোপন ও প্রয়োজনীয় তথ্য তিনি জানে। তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি (অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস) বিবাদী পক্ষ থেকে সরে দাঁড়াননি।

যে কারণে ২৮/১১/২০১৯ তারিখে আমি বিষয়টির সমাধানের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আবেদন করি। যার পরিপেক্ষিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সুবাস বাবুকে শোকজ করে। বার কাউন্সিলের নোটিশ পেয়ে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি আমার আত্বীয়স্বজনকে ও নানাবিধ ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

যেহেতু আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি সেহেতু অন্যরা যাতে এরকম আইনজীবি দ্বারা আর যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব কিছুর প্রতিবাদ জানিয়ে আজকের এই সম্মেলন করা।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস এ বিষয়ে প্রথমে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো জমি চাইনি। অনেকদিন আগের কথা আমার স্মরণেও নাই’।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের শোকজের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সাংবাদিকদের কাছে বলার কিছু নাই। আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাথে বুঝব।

এ বিষয়ে নড়াইল জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট হেমায়েতুল্লাহ হিরু জানান, ১৯৭২ সালের প্রফেশনাল এটিকেট অ্যাক্ট এ বিস্তারিত উল্লেখ আছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

সূত্র: জাগোনিউজ