আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ধীরগতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চলমান করোনা পরিস্থিতি এবং জনবল সংকটের মুখে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ১১ বছর অতিবাহিত হতে চললেও অনেকটা খুঁড়িয়ে চলছে অভিযুক্তদের বিচার কার্যক্রম। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে প্রায় ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায়। আর বিচার পাওয়া নিয়ে বিচারপ্রার্থীদেরও অপেক্ষা দিন দিন দীর্ঘ হতে শুরু করছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই দিনে ট্রাইব্যুনালের জন্য নিজস্ব প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থাকে যুক্ত করা হয়। তিন বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলতে শুরু করে দেশের ঘৃণ্যতম অপরাধীদের বিচারকার্য। পরে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। যা ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নিষ্ক্রিয় করে ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠিত হয়। এরপর থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় নেমে আসে ধীরগতি।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট ৪২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১১৬ জন। এদের মধ্যে ১০৩ জন দণ্ডপ্রাপ্ত হন, রায় হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জন মারা যান, পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ২ জন এবং ১ জন আসামি অপরাধ সংগঠনের সময় শিশু থাকায় তাকে খালাস প্রদান করা হয়। এছাড়াও একটিমাত্র ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে চলমান মামলার সংখ্যা ৩৮ টি। তাই মামলা নিষ্পত্তির দিক বিবেচনায় বছরপ্রতি গড়ে মামলা নিষ্পত্তির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪টিতে।

বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কয়েকবছর একসঙ্গে দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য চলমান থাকায় মামলা নিষ্পত্তির হার বেশি ছিল। বর্তমানে মাত্র একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য চলছে। ফলে ট্রাইব্যুনালে বছরপ্রতি মামলা নিষ্পত্তির হার ৫/৬টির মত। বিচারপ্রার্থী ও শহীদ পরিবারগুলোর দাবি মতে দ্রুত এসব মামলার বিচার শেষ করার জন্য আরও এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজন। নয়তো বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও ১০/১৫ বছরের অধিক সময় কেটে যাবে। এদিকে করোনা পরিস্থিতিও বিচার দ্রুত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। তাই আমরা আশা করছি, দ্রুত সরকার এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে অতিদ্রুত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে।

এদিকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটি মোট ৭৭টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে গত ১১ বছরে তদন্ত সংস্থায় একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩ হাজার ৫০৩ জনের বিরুদ্ধে আরও ৬৯৭টি অভিযোগ জমা রয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও অসংখ্য ট্রাইব্যুনাল গঠন না হলে বিচার সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম. সানাউল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের আদালত সংকট দূর না হওয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা নিয়ে অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। ততদিনে মামলার সাক্ষী, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ হুমকির মধ্যে পড়ছে। এমনকি আসামিদের বিচারের পূর্বে অনেকে মারা যাচ্ছে। বিচারকদের অসুস্থতার কারণে একটিমাত্র ট্রাইব্যুনালে পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা তদন্ত সংস্থা থেকে আরও ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানাই।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন