বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

লকডাউনে খেঁটে-খাওয়া মানুষদের জেলে পাঠানো ও আরোপিত জরিমানায় উদ্বেগ জানিয়েছে ব্লাস্ট

দ্বিতীয় দফা লকডাউনে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে এবং জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া সহস্রাধিক হতদরিদ্র খেঁটে-খাওয়া মানুষদের জেল খাটানো এবং আরোপিত জরিমানায় ব্লাস্ট উদ্বেগ প্রকাশ করছে । পাশাপাশি এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের উপর আরোপিত জরিমানা মওকুফ, বাতিল এবং তাদের আইনী সহায়তা প্রদান করে দ্রুত মুক্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে ব্লাস্ট। এছাড়া ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সে বিষয়ে সূষ্ঠ’ তদারকির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও ব্লাস্টের মূখ্য আইন উপদেষ্টা বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘‘সরকারী বিধি নিষেধ সবাইকে মেনে চলতে হবে, তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আটকে না রেখে তারা যেন দ্রুত সহায়তা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’’

ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক, সারা হোসেন বলেন, ‘‘লক ডাউনের বিধিনিষেধ এমনভাবে প্রয়োগ করা উচিত না যাতে সুরক্ষার নামে জনগণের হয়রানি হয়। পাশাপাশি গ্রেফতারের পরে কেন জেল জরিমানা হবে সেটা নিয়ে জরুরী পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’’
ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজউল করিম বলেন, ‘‘জরিমানা কোন সমাধান নয়। ।’’ ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবীর হুদা বলেন, ” দরিদ্র ব্যক্তিদের জরিমানা না দিয়ে বা গ্রেফতার না করে তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌছিয়ে দিলে তারা নিশ্চই বিধিনিষেধ মেনে চলতে পারবেন।”

প্রেক্ষাপট:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হতে জানা যায়, এ পর্যন্ত সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার হয়েছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ডিএমপি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬ এর ৬৯, ৭৭,৭৮ এবং ১০০ ধারার অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এই ব্যক্তিদের বেশীরভাগই সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এদের অধিকাংশেরই তাদের উপর আরোপিত জরিমানা/মুচলেকার অর্থ এবং আইনজীবীর ফিস পরিশোধ করার ন্যূনতম সামর্থ্যটুকুও নেই।

সংবিধানের ১৫(ক) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণসমূহের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ৩২ এ আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না বলা হয়েছে।

লকডাউনে জরুরী প্রয়োজনে বা জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া অসহায় মানুষদের আটক করে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন হচ্ছে, ফলে তারা আরও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

বর্তমান করোনা পরিস্তিতির ভয়াবহতা, জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরিধানের প্রয়োজনীয়তা, করোনা মোকাবেলায় সরকার প্রদত্ত বিধি-নিষেধ অমান্য করলে অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কি কি আইনী পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে- এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অনুরোধ করছি।
(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)