বারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু: স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় বরিশালের মেয়ে আসপিয়ার পুলিশে চাকুরী হয়নি। কেন হয়নি তা কতটুকু বৈধ তা একটু বিশ্লেষন করা জরুরী। দেশের সার্বভৌম ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চাকুরী প্রার্থীদের নাগরিকত্ব ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই বাচাই করা অপরিহার্য। বিশেষ করে নিরাপত্তাবাহিনী ও প্রশাসনের সাথে জড়িত যে কোন চাকুরীর জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের সামরিক বাহীনীর একজন মেজর সাহেবকে আইডেন্টিফাই করা হয়েছিল উনি ভারতীয় নাগরিক। যিনি পরিচয় গোপন করে সামরিক চাকুরী করছিলেন। ঠিক সেভাবে ১৯৬৪ সালে ইন্ডিয়ান সেনাবহিনীর একজন বাঙালি অফিসারকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উনি আসলে পাকিস্তানের নাগরিক।
পত্রিকাগুলোর খবরে দেখলাম আসপিয়ার স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় বরিশাল রেঞ্জপুলিশ তাকে চাকুরী দেয়া হবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। আসপিয়া যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয় তবে স্থায়ী ঠিকানা থাকুক বা না থাকুক সে যদি ইন্টারভিউ এর সব ধাপ কোয়ালিফাই করে তবে সে পুলিশের চাকুরী পেতে আইনগতভাবে অধিকারী।
এখন দেখা যাক চাকুরী সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে কী অধিকার দেয়া আছে। সংবিধানের তৃতীয়ভাগে অনুচ্ছেদ ২৯ এ বলা আছে –
There shall be equal opportunity for all citizens in respect of employment or office in the service of the Republic.
অনুচ্ছেদ ৪০ অনুসারে আইনের বাধ্যবাদকতা সাপেক্ষে যোগ্য প্রতি নাগরিকের পছন্দ মতো কর্মে যোগদানের অধিকার রয়েছে। দু’টি অনুচ্ছেদই শুধু সিটিজেনদের চাকুরীর অধিকারের কথা বলা আছে; স্থায়ী ঠিকানা সম্বলিত নাগরিক হতে হবে এ কথা বলা হয়নি। অনুচ্ছেদ ৪০ বলছে “আইনের বাধ্যবাধকতা সাপেক্ষে”।
এখন স্থায়ী ঠিকানা না থাকার ব্যাপারে একজনের সিটিজেনশিপ থাকে কি না তা দেখব আইনে কী বলা আছে। নাগরিকত্ব আইন ১৯৫১ তে স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে বা পূর্ব পুরুষের ভিটা মাটি পরবর্তী পুরুষের কেউ দারিদ্র বা অন্য কোন কারণে বিক্রি করে দিলে তার সিটিজেনশীপ চলে যাবে বা তাকে স্টেইটলেস ঘোষণা করা হবে তা কিন্তু বলা নাই।
Bangladesh Citizenship (Temporary) Order 1972 doesn’t impose such condition that if a citizen lost his homestead land then his citizenship will be extinguished.
বিষয়টা আরো পরিষ্কার করে বলা যায়, দেশের বেদে সম্প্রদায় যাদের স্থায়ী ঠিকানা নাই তারা কী দেশের সিটিজেন নয়? অবশ্যই সিটিজেন। নদী ভাঙ্গনে যারা ভিটে মাটি উচ্ছেদ হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয় যাদের পূর্ব ঠিকানার কোন অস্তিত্বই নাই, পুলিশ ভেরিফিকেশনে তাদের স্থায়ী ঠিকানার অস্তিত্বই পাবেনা তাদের কী সরকারি চাকুরীতে ঠাই হবেনা? চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম নদী গর্ভে চলে গেছে, তাহলে কী ঐ অঞ্চলের লোকেরা পুলিশের চাকুরী পাবেনা?
৪০ অনুচ্ছেদে- subject to restrictions imposed by law …..বলা আছে। পুলিশের চাকুরী নিয়ন্ত্রণ হয় Police Act ও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী। সেখানে কোথাও বলা নাই স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে পুলিশে চাকুরী করা যাবে না। চাকুরী সংক্রান্ত শর্ত হচ্ছে – নাগরিকত্ব ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করা হবে। কিন্তু কোথাও বলা নাই একজন প্রমাণিত সিটিজেন তার স্থায়ী ঠিকানা না থাকার কারণে পুলিশের চাকুরী পাবেনা। তবে চাকুরী প্রার্থীকে ব্যাখা দিতে হবে কেন তার স্থায়ী ঠিকানা নাই। স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে তাকে সিটিজেন বলা যাবেনা – এটা কখনোই বলা যাবেনা। যদি বলা হয় তবে তা বেআইনী হবে। আসপিয়া যদি তার সিটিজেনশিপ প্রমাণ করতে পারে এবং কেন তার স্থায়ী ঠিকানা নাই তার ব্যাখা পুলিশ ভেরিফিকেশনে সত্য প্রমাণিত হলে আসপিয়া সংবিধান অনুযায়ী পুলিশের চাকুরী পাবার অধিকারী।
এখন দেখা যাক সিটিজেনশিপ, স্টেইটলেসনেছ এর ব্যাপারে গ্রেইট বৃটেনের কী আইন আছে।
The British Citizenship Act (amendment up to date) recognises the citizenship of Nomad and Gypsy communities who do not have permanent addresses and who like to live in Caravans and Riverboats instead of permanent structural houses.
প্রিটি জিপসি মেয়েরা ও হ্যান্ডসাম জিপসি ছেলেরা সরকারী কাজ শেষ করেই তাদের কারাভ্যান বা নৌকায় চলে যায়। আবার ভাল না লাগলে চাকুরী ছেড়ে নৌকার নোঙ্গর তুলে অন্য কাউন্টিতে চলে যায়। British Employment Rules অনুযায়ী permanent address or ethnic address or origin is immaterial factors for the public employment. কারণ বৃটিশ কনভেনশন অনুযায়ী সবাই সমান ও সমান অধিকারের অধিকারী। এমনকি একজন ওভারসিজ স্টুডেন্ট তাদের হোম অফিসে চাকুরী করতে পারে যা খুবই সেনসিটিভ মন্ত্রণালয়। তারপরও এরা চাকুরী দিতে ভয় পায়না কারণ surveillance (নজরদারি)। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও surveillance এর আওতায় থাকেন, তারা তাদের পেশাগত জীবনে কোন তথ্য চুরি করে বিদেশে পাঠাতে পারবেন না। এমনকি তথ্য মন্ত্রী ও তার ব্যক্তিগত জীবনের কোন কিছুই গোপন রাখতে পারবেন না।
United Nations Convention on Nationality & Statelessness 1961 doesn’t has any provisions for loosing nationality if some one has no permanent homestead land. UNHCR published guidelines for loss and deprivation of nationality, সেখানেও একথা বলা নাই নিজ দেশে স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে তার নাগরিকত্ব চলে যাবে। সাত স্তর পার হয়ে আসা আছপিয়াকে চাকুরী না দেয়ার পুলিশের যে কোন সিদ্ধান্ত হববে বেআইনী ও অসাংবিধানিক।
আসপিয়ার উচিত কেন তার স্থায়ী ঠিকানা নাই- তা ব্যাখা করে পুলিশ প্রধান (IG of Police) বরাবর অতি শীঘ্রই দরখাস্ত দেয়া। তাতে কাজ না হলে সে যদি আইনের আশ্রয় নেয় তবে সংবিধান অনুযায়ী মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট আদেশ দিতে পারে সে চাকুরী পাওয়ার অধিকারী অথবা পুলিশ অথরিটিকে ডাইরেকশন দিতে পারে আসপিয়াকে চাকুরী দেয়া হউক।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট