সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা (ফাইল ছবি)

ইসি গঠনের খসড়া আইন নিয়ে সাবেক সিইসি শামসুল হুদার অসন্তোষ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের খসড়া আইন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, খসড়া আইনটি পড়ে মনে হয়েছে এটা নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশে নয়, বরং সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য। নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা আরও স্পষ্টভাবে আইনে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা’ বিষয়ক ছায়া সংসদে শনিবার (২২ জানুয়ারি) তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. হুদা আরও বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি জনমত যাচাইয়ের জন্য উপস্থাপিত করা উচিত। এটা তাড়াহুড়া করে করা উচিত না। সময় নিয়ে এবং যোগ্য মানুষের সহযোগিতায় আইনটি তৈরি করা উচিত। কারণ আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে যাচ্ছি। ৫০ বছর পর এটা যদি মানুষের কাছে আর গ্রহণযোগ্য না হয় সেটা কাম্য নয়। দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এর আগে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আছে কিনা সে বিষয়টি যেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ, তাই আইনটি জনগণের মাঝে সার্কুলেট করা উচিত জনমত যাচাইয়ের জন্য।

নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ভারতে এত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন হয়, সেখানে তো সার্চ কমিটির প্রয়োজন হয় না। রাষ্ট্রপতি সরাসরি নিয়োগ দেন। বাংলাদেশেও হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও সার্চ কমিটি গঠনের প্রয়োজন হয় না।

এমনকি সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে আস্থার অভাব প্রকাশ করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, এমন মানুষকে নির্বাচন কমিশনার বানানো উচিত, যার বিরুদ্ধে কোনো নৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক অসদাচরণের অভিযোগ নেই৷ বাংলাদেশে এখনও বহু স্বচ্ছ কর্মকর্তা আছেন। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল করেছেন কিনা এ রকম দলীয় বিবেচনা করলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা সম্ভব না।

দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন দেখিনি। আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে দুর্নীতির শাস্তি পেতে দেখা যায় না। বরং ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে সে রকম নজির ছিল।

তিনি আরও বলেন, দেশে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। যদিও একটা দল হটিয়ে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা কোনো ভালো উদাহরণ নয়৷ নির্বাচনকালীন সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ বা প্রকল্প যদি না নেয় যাতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।

এ সময় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তিনটি নাম প্রস্তাব করেন। এই তিনজন ব্যক্তি হলেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা।