ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
আদালতে মিজানুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
শুনানিতে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন, ফোন রেকর্ড ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত যে ডিআইজি মিজান বাধ্য হয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। তাই চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ঘুষ দেওয়াটা অপরাধের মধ্যে পড়ে না।’
‘তাছাড়া এ ৪০ লাখ টাকার বৈধতা সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তাই তিনি খালাস পাওয়ার যোগ্য। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচারের প্রার্থনা করছি’, যোগ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক।
অন্যদিকে একই মামলার আসামি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খান্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে অপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন মর্মে সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
এর আগে, গত ২৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
শুনানিকালে ডিআইজি মিজান এবং এনামুল বাছিরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
এরপর গত ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন মিজানুর রহমান এবং এনামুল বাছির। ওই দিন তারা লিখিত বক্তব্য জমা দেবেন বলে আদালতকে জানান। এজন্য তারা সময়ও চান।
আদালত ১২ জানুয়ারি আসামিদের লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন ডিআইজি মিজান ৬ পৃষ্ঠা এবং এনামুল বাছির ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন।
লিখিত বক্তব্যে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, ডিআইজি মিজান অস্বীকার করেন না যে তিনি ঘুষ দেননি। লিখিত বক্তব্যেও তিনি তা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি তা দিতে বাধ্য হয়েছেন। দণ্ডবিধির ১৬৫ (২) অনুযায়ী কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য হলে সেটা অপরাধ নয়। অভিযোগের সত্যতা না থাকার পরও ঘুষ না দিলে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেবেন বলে হুমকির কারণে তিনি ঘুষ দিতে বাধ্য হন।
মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। একই বছরের ১৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ওই বছর ১৯ আগস্ট শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
প্রসঙ্গত, দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছিলেন। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সাংবাদ প্রকাশিত হয়, মিজান অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। তৎক্ষণিক দুদক একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিও ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি রজু করা হয়।