একুশে পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন
বিশিষ্ট আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন

একুশে পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা পাচ্ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

কে এই আব্রাহাম লিংকন

এস. এম. আব্রাহাম লিংকন ষাটের দশকের ঠিক মধ্যভাগে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। আট ভাই বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। খেলাঘর দিয়ে সাংগঠনিক জীবনের সূচনা। স্কুলের গন্ডি পেরুবার আগেই রাজনীতির হাতেখড়ি। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র এবং রাকসুর সাবেক এজিএস ও রাবির সিনেট সদস্য এস এম আব্রাহাম লিংকন ছিলেন। সামরিক শাসন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ৯০ এর ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন। অধুনালুপ্ত ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা। ফেলানী হত্যা মামলায় আইনজীবী হিসেবে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেন।

ইতিহাস–সচেতনতা

রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন ইতিহাস–সচেতন। মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের অংশগ্রহণের কারণে শিক্ষাজীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিদর্শন সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। এভাবেই একদিন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজে হাত দেন এস এম আব্রাহাম লিংকন। একসময় বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর বই মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস: রংপুর। এ বই লেখার জন্যই তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে শুরু করেন উত্তর জনপদের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলপত্র, স্মারক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন। ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহের কথা শুনে অনেকেই আগ্রহ করে তাঁদের কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র লিংকনের সংগ্রহশালায় দান করেন। মাঠপর্যায়ে এই কাজগুলো করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বহু অজানা তথ্য তাঁর হাতে আসে। তিনি মাঠপর্যায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহ করেন। এমন অনেক দলিল সে সময় হাতে এসেছে যা জাতির সামনে ইতিপূর্বে কখনোই উপস্থাপিত হয়নি। অথচ সেসব উত্থাপিত হওয়া আবশ্যক ছিল।

‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ এর প্রতিষ্ঠাতা

ইতিপূর্বে অনেক স্মারক তিনি বিভিন্ন জাদুঘরে দিলেও আঞ্চলিক হওয়ার কারণে সে গুলো তেমনভাবে উপস্থাপিত না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্থানীক দলিল দস্তাবেজ নিয়ে নিজেরাই একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাস ধরে রাখার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুড়িগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে ব্যাপারী পাড়ায় গড়ে তুলেন ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ নামের ব্যতিক্রমী এক জাদুঘর। ১৪ শতাংশ জমির ওপর নিজের বসবাসের জন্য নির্মিত ‘লিংকনস ইন’ নামের বাড়িতে নিজের সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন মানুষের দেওয়া ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস এবং আঞ্চলিক ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা’ হিসেবে তিনি ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন এ প্রতিষ্ঠান।

একুশে পদকের জন্য মনোনীত যারা

আইনজীবী লিংকন ছাড়া এবছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত ব্যক্তিরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মোস্তফা এম এ মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন (মুকুল) (মরণোত্তর)। শিল্পকলা (নৃত্য) বিভাগে জিনাত বরকতউল্লাহ, শিল্পকলা (সঙ্গীত) বিভাগে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেণু। অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ। মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ এ বি এম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার। সাংবাদিকতায় এম এ মালেক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন। শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ। সমাজসেবায় সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের। ভাষা ও সাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। গবেষণায় ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল, ড. মো. এনামুল হক, ড. সাহানাজ সুলতানা ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌস।