নাটোরে নদী থেকে বালু উত্তোলন, সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
আদালত

দুর্নীতির দায়ে চেয়ারম্যান-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার ৯ বছরের কারাদণ্ড

দরিদ্র জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের আপরাধে দায়েরকৃত মামলায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাসহ তিন জনপ্রতিনিধিকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নোয়াখালীর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করে আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

দণ্ডিতরা হলেন- নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক, হাতিয়া উপজেলার ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেহেরাজ উদ্দিন এবং একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাহেরা বেগম ও ছকিনা খাতুন শাহানারা।

ঘটনার বিবরণ

২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের জাটকা আহরনকারী হত দরিদ্র ভিজিএফ ৩৮৯ জন জেলে প্রত্যেকের জন্য ১৬০ কেজি হারে বিতরণের ৬২.২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার দরিদ্র ভিজিএফ জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমাণে বিতরণ করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন।

তদন্তকালে সাক্ষীদের জবানবন্দি থেকে অর্ধেক চাল বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়ায়। এক্ষেত্রে জেলেদের প্রায় ৩১.১২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করার তথ্য বেরিয়ে আসে।

একইভাবে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ২০১৬ জানুয়ারী হতে জুন মাস পর্যন্ত হত দরিদ্র (ভিজিডি) মহিলাদের চাল বিতরণের খাদ্য শস্য ছাড়করণপত্র মোতাবেক নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ডধারী ভিজিডি মহিলাদের নিকট বিতরণের জন্য প্রতি মাসে ৩.৫৭০ করে ছয় মাসের জন্য মোট ২১.৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার ভিজিডি মহিলাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমাণে বিতরণ করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন।

এক্ষেত্রেও ১০.৭১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে এর সরকারী মূল্য প্রায় ১৫ লাখ ৫ হাজার ৮৮০ টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করে আত্মসাৎ করেন।

আসামিরা বরাদ্দপত্র নিয়ে চাল উত্তোলন করে ২০১৬ সালের ১৫ মে চাল বিতরণের সময় নির্ধারিত পরিমাণে এবং তালিকা অনুযায়ী বিতরণ না করে কাউকে ১০ কেজি, কাউকে ২০ কেজি হারে চাউল বিতরণ করে প্রতিটি মাস্টার রোলে ৩০ কেজি উল্লেখ করে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী করেন।

একইসঙ্গে প্রত্যেক চাল গ্রহীতার নিকট থেকে প্রতিবার চাউল গ্রহণের সময় ১৬০ টাকা হারে চাঁদা (চৌকিদারী ট্যাক্স উল্লেখ করলেও আদায় সংক্রান্তে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ কর্তৃক রেজুলেশনে অনুমোদন নাই) আদায় করে ব্যাংক হিসাবে জমা না করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণের রেজুলেশনে অনুমোদন না করিয়ে আত্মসাৎ করেন।

এছাড়াও আসামিরা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন খাল ও বাজার অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করে ডাক দিয়ে অলিখিতভাবে ইজারা প্রদান করে অর্থ আদায় করে ইউপি ফান্ডে জমা না করে আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েল হাতিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৩৪২/৩৩২/১৮৬/৩৫৩ ধারায় আভিযোগ আনা হয়।

এরপর ওই মামলা তদন্ত করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান (বর্তমানে উপপরিচালক হিসেবে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত)। তদন্ত শেষে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।