বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

বাবার সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার নিয়ে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হল ব্লাস্ট

হিন্দু ধর্মের দায়ভাগা মতবাদ অনুসারে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে হিন্দু নারীর প্রতি বৈষম্যের সাংবিধানিকতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) -এর পক্ষভুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামান -এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ গত রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ আবেদন মঞ্জুর করেন।

একইসাথে হাইকোর্ট কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গকে এ রিট মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া অ্যামিকাস কিউরিরা হচ্ছেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এম. আমিন উদ্দিন, প্রবীর নিয়োগী ও রানা দাস গুপ্ত। এছাড়াও হাইকোর্ট একটি বৃহত্তর বেঞ্চে এ রিট মামলাটির শুনানির জন্যে প্রধান বিচারপতির নিকট আবেদন করেছেন।

মামলার প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কিছু অংশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি বন্টন ও অন্যান্য পারিবারিক বিষয়ে দায়ভাগা মতবাদের পারিবারিক আইন প্রচলিত রয়েছে। এ আইনের বিধান অনুসারে হিন্দু পরিবারে পিতার মৃত্যুর পরে পুত্র সন্তানেরা পৈতৃক সম্পত্তি পেলেও কন্যা সন্তানেরা এ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। 

শতবছর ধরে বিদ্যমান এ বৈষম্যমূলক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে অনন্যা দাস গুপ্তা হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। অনন্যা দাস গুপ্তাকে তার ভাই অনির্বাণ দাস গুপ্তা তাদের বাবার সম্পত্তির অংশ থেকে বঞ্চিত করেছেন বিধায় তিনি উক্ত মামলাটি করেন।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী এ প্রথাকে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৪২ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেন।

উক্ত প্রথার সংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা এই মামলার শুনানি শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। উক্ত রুলে বৈষম্যমূলক এ প্রথাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবেনা তা ব্যাখ্যা করতে সরকার এর প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।

একইসাথে সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে কেন হিন্দু পরিবারের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারের জন্য হিন্দু নর-নারীর মধ্যে বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা তা জানতে চেয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আদেশ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে এ রিট মামলায় ব্লাস্ট আরো চারটি মানবাধিকার সংগঠন, যথাক্রমে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও নারীপক্ষকে সাথে নিয়ে পক্ষভুক্তির আবেদন দায়ের করে।

এই মামলায় ব্লাস্টের পক্ষভুক্তির কারণ

ব্লাস্ট ১৯৯৩ সালে এর যাত্রা শুরু করার পর থেকেই মানবাধিকার, বিশেষত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। ব্লাস্ট বিভিন্ন সময়ে হিন্দু পারিবারিক আইনসহ বৈষম্যমূলক বিভিন্ন আইনের সংস্কারে কাজ করেছে। এছাড়াও ব্লাস্ট নারীদেরকে তাদের আইনগত অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করতে ও সকল ধরণের বৈষম্য দূরীকরণে সারাদেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করেছে।

হিন্দু পারিবারিক আইনবিষয়ক ব্লাস্টের কাজের মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০১২ সালে পাসকৃত হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বিষয়ক আইন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সমতার কথা বিবেচনা করে প্রস্তুতকৃত খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন। এছাড়াও হিন্দু নারীদের তালাক দেয়ার অধিকার বিষয়ক ২০১৫ সালের একটি মামলায় (রিট মামলা নং. ৫১১/২০১৫) হাইকোর্ট ব্লাস্টকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এসকল বিষয়াদি বিবেচনা করে হিন্দু পারিবারিক আইনের সংস্কারের মাধ্যমে হিন্দু নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানসমূহ দূরীকরণে ব্লাস্টের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্লাস্ট উক্ত মামলায় পক্ষভুক্তির জন্যে আবেদন দায়ের করে। এ আবেদনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্লাস্টের কর্ম-অভিজ্ঞতার আলোকে হাইকোর্টকে এই মামলার সুষ্ঠু রায় প্রদানে সহায়তা করা।