কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলার নতুন অধ্যায় ‘ই-ফাইলিং’

উচ্চ আদালতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি–সংক্রান্ত (নৌ) মামলা দায়ের করতে ই-ফাইলিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারও। নতুন এই পদ্ধতিতে মামলা দায়ের করতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি কারিগরি সমস্যার সমাধানে বসানো হয়েছে একটি হেল্প ডেস্ক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলার নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। অনলাইনে কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলার ব্যবস্থাপনায় ওই দিনই হাইকোর্ট বিভাগে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালু করা হয়।

উদ্বোধনের দিনই কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলা বা আপিল বা দরখাস্ত করার ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এতে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি–বিষয়ক মামলা/ আপিল/ দরখাস্ত ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে ৯ ডিসেম্বর (গত বছরের) থেকে করতে হবে। এ ছাড়া আইনজীবী নিবন্ধন এবং ই-ফাইলিং প্রক্রিয়া বিষয়ে দিকনির্দেশনাও সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

আদালতসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি চালু হলেও শুরুর দিকে আইনজীবীর সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। এ অবস্থায় ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে মামলায় উৎসাহিত করতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যেকোনো ধরনের কারিগরি সমস্যা সমাধানে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘আদিম দেওয়ানি’ শাখায় একটি হেল্প ডেস্ক বসানো হয়। আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এ কাজে সরকারের এটুআই প্রকল্পের দুজন কর্মী কাজ করছেন।

হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি–সংক্রান্ত বিষয়াদির শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়ে আসছে। এটি ‘কোম্পানি কোর্ট’ হিসেবেও পরিচিত। তবে এখন অবকাশ চলছে।

তবে প্রথম দিকে তেমন আগ্রহ দেখা না গেলেও আস্তে আস্তে নতুন এই পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি–সংক্রান্ত ৬৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানিসংক্রান্ত মামলা ৬৪টি এবং অ্যাডমিরালটি–সংক্রান্ত মামলা ৫টি।

বিশেষজ্ঞ মত

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব আদালতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মামলা করা হলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতের সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার শুরুতেই বিচারপ্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল ফাইলিং বাস্তবায়নের মাধ্যমে মামলাসংশ্লিষ্ট ফাইল (নথি) দ্রুততার সঙ্গে অনলাইনে দায়ের, গ্রহণ ও অনুমোদন করা যাবে। এতে আদালতের কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হবে বলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন আইনমন্ত্রী।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিচারকাজে গতি বাড়াতে কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলার ই-ফাইলিং ভালো উদ্যোগ ও নতুন সূচনা। তবে প্রযুক্তির এই যুগে তথ্যের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সুপ্রিম কোর্টের তথ্য কেউ হাতিয়ে (হ্যাক) নিতে না পারে।

বিষয়টি নতুন, তাই দক্ষ ও ভালো প্রশিক্ষকদের দিয়ে বিচারক, আইনজীবী, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবীর সহকারীসহ অংশীজনদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শুরুতে হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, তবে সবার আন্তরিক সহযোগিতায় সমস্যার সমাধান হবে বলেও আশা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক।

যেভাবে ই–ফাইলিং পদ্ধতিতে মামলা করা যাবে

ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে একজন আইনজীবী তাঁদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নির্ধারিত পোর্টালে লগইন করতে পারবেন। পোর্টালে লগইন করার সেখানে কোম্পানি ও নৌসংক্রান্ত মামলার প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ আবেদন, কোর্ট ফি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের ছবি তুলে বা স্ক্যান করে তা আপলোড করে মামলা করতে পারেন।

এরপর সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মচারীরা সেসব তথ্য ও স্ক্যান করা কাগজপত্র পর্যালোচনা করবেন। অ্যাফিডেভিটসহ মামলার যাবতীয় আইনিপ্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেষ করবেন। অ্যাফিডেভিটের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় তার জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে হওয়া সেসব মামলার তথ্যাদি বিচারক ও কর্মচারীরা ওই পোর্টালের মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে পারবেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ‘অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট’ (এটুআই) প্রকল্পের সহায়তায় সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এটুআই অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি সুপ্রিম কোর্টকে হস্তান্তর করেছে। হাইকোর্ট বিভাগে কোম্পানি ও অ্যাডমিরালটি–সংক্রান্ত (নৌ) মামলা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে ই-ফাইলিং পদ্ধতিতে করা যাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্যপ্রযুক্তি শাখা সফটওয়্যারটির রক্ষণাবেক্ষণ করে। তবে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্ষেত্র বিশেষে এটুআই-এর কারিগরি সহায়তা নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

সূত্র: প্রথম আলো