যশোর জেলা প্রশাসনের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে বাঁ পাশ থেকে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। এ ছাড়া মঞ্চে আছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাংসদ নাসির উদ্দীন ও শাহীন চাকলাদার এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল ছবি: সংগৃহীত
যশোর জেলা প্রশাসনের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে বাঁ পাশ থেকে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। এ ছাড়া মঞ্চে আছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাংসদ নাসির উদ্দীন ও শাহীন চাকলাদার এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল ছবি: সংগৃহীত

যশোরে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের সঙ্গে সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের বাগ্‌বিতণ্ডা

সুধীজনদের নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসনের ইফতার অনুষ্ঠানে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।

হত্যা মামলায় যশোর জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার জামিন না দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) যশোর সার্কিট হাউসে ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে যশোরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরগরম হয়ে উঠেছে।

ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইফতারের কিছু সময় আগে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের সঙ্গে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদারের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানসহ অন্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করেন।

যশোর জেলা প্রশাসনের কেউ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে মঞ্চের এক প্রান্তে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক বসেন। তাঁদের কয়েকজনের পরে সাংসদ শাহীন চাকলাদার বসেন। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে শাহীন চাকলাদার উঠে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলামের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উঠে দাঁড়ান। তখন শাহীন চাকলাদার তাঁর (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) কাছে জানতে চান ছাত্রলীগ নেতা (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) রওশন ইকবাল শাহী কেন জামিন পাননি। একজন জনপ্রতিনিধির এমন প্রশ্নে তিনি বিব্রত হন। বিষয়টি তাঁর এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে জানান। শাহীন চাকলাদারকে তিনি বলেন, ‘আপনি এটা বলতে পারেন না।’ এরপর পরিস্থিতি খানিকটা উত্তপ্ত হয়।

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘সাবেক এক ছাত্রনেতার জামিনের বিষয়ে কথা বলছিলেন সাংসদ শাহীন চাকলাদার। সেই ছাত্রনেতা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী নাঈমুল ইসলাম হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় সম্প্রতি র‌্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। তাঁর জামিন না হওয়ার বিষয়ে সাংসদ শাহীন চাকলাদার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরপরই শহরজুড়ে বিষয়টি চাউর হতে থাকে। যশোরের সাংবাদিক সাজেদ রহমান তাঁর ফেসবুকে গত বৃহস্পতিবার রাতেই একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘যশোর জেলা প্রশাসকের আয়োজনে আজ সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন যশোরের বিশিষ্টজনেরা। এসেছিলেন তিনজন মাননীয় সংসদ সদস্য। তাঁদের সাথে কোন সুধীজনের কুশল বিনিময় হয়নি। তাহারা ইফতারি করে প্রস্থান করেছেন। বিষয়টি অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।’

এই স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্য করেছেন যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম। তিনি লিখেছেন, ‘একজন ছাত্রনেতাকে হত্যা মামলায় জামিন না দেওয়ায় ইফতার পার্টিতে একজন মাননীয় এমপি বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজের সামনে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে হুমকি দিয়েছেন, সে খবর কি জানেন?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘যশোর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলীসহ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি, হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের এক নেতাকে জামিন না দেওয়ায় একজন মাননীয় এমপি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ইফতার মাহফিলে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের সঙ্গে সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের একটা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কী ঘটেছে, সেটা আমি জানি না।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সাংসদ নাছির উদ্দিন, যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গনী খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সায়েদ মিনহাজ সিদ্দিক, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব, সরকারি এম এম কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অমল কুমার বিশ্বাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান প্রমুখ।

সূত্র: প্রথম আলো