স্ত্রীকে অন্য নারীর সঙ্গে তুলনা মানসিক নির্যাতনের শামিল: কেরালা হাইকোর্ট
কেরালা হাইকোর্ট

ধর্ষণের সংজ্ঞা লিঙ্গনিরপেক্ষ হওয়া উচিত: কেরালা হাইকোর্ট

ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের অপরাধের সংজ্ঞা লিঙ্গনিরপেক্ষ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে দেশটির কেরল রাজ্যের উচ্চ আদালত। এসময় ধর্ষণের সংজ্ঞা নিরেপক্ষ নয় উল্লেখ করে কেরালা হাইকোর্ট বলেছে, বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়, কিন্তু নারী এমন কাজ করলে অভিযোগ দায়ের করার পথ নেই।

সম্প্রতি এক বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় সন্তান বাবা না মা কার কাছে থাকবে তা নিয়ে সওয়ালের সময়ে বাবার বিরুদ্ধে পুরনো ধর্ষণের অভিযোগের কথা উঠে আসে। বাবার কৌঁসুলি জানান, তাঁর মক্কেল ওই মামলায় জামিন পেয়েছেন। বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক তৈরির ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

তখনই কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি মহম্মদ মুস্তাক বলেন, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ নম্বর ধারা (যাতে ধর্ষণের সংজ্ঞা রয়েছে) লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়। যদি এক জন পুরুষ এক জন মহিলাকে বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায়। কিন্তু কোনও মহিলা একই কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়েরের পথ নেই। এটা কেমন?’’

বিচারপতি মুস্তাকের দেওয়া এক সাম্প্রতিক রায়েও এই মতের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। সেই রায়ে তিনি জানান, যদি কোনও মহিলার স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয় তবেই বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হবে।

বিচারপতি মুস্তাক জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধি ধর্ষণকে লিঙ্গনিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখে না। ফলে এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কার পক্ষে অন্যের উপরে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব ছিল তা বিচার করে দেখতে হবে। বিচারপতি মুস্তাকের মতে, ‘‘আইনে একটা অলীক ধারণা করা হয়েছে যে পুরুষই সব সময়ে প্রভাব বিস্তার করার পক্ষে উপযুক্ত স্থানে থাকবেন।’’

বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইনকে সব সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য সমান করে তোলারও সমর্থক বিচারপতি মুস্তাক। সম্প্রতি তিনি এক রায়ে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে মহিলার পক্ষে বিচ্ছেদের জন্য উপযুক্ত আইনি কারণ হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ধর্ষণের সংজ্ঞাকে লিঙ্গনিরপেক্ষ করা নিয়ে আগেও আর্জি পেশ হয়েছে দেশের নানা আদালতে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টেও এই বিষয়ে আবেদন পেশ হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি।

এদিকে এক মামলায় ২০১৭ সালে সরকারকে নোটিস পাঠিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চায় দিল্লি হাইকোর্ট। এ প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে সরকার হাইকোর্টে জানায়, ধর্ষণের শিকার হন মূলত মহিলারাই। তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখে তৈরি ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন চালু রাখা প্রয়োজন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা