ভুক্তভোগীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বললেন সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

আইনজীবীর ‘১২ কোটি টাকা ফি’, অনুসন্ধানের নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট

আইনি ফি হিসেবে সম্প্রতি বিপুল টাকা নেওয়া–সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বার কাউন্সিলের সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আশরাফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক।

এর আগে এক আইনজীবীর আইনি ফি হিসেবে বিপুল টাকা নেওয়া–সম্পর্কিত বিতর্কসহ অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আশরাফুল ইসলাম ওই রিট করেন। আর যে আইনজীবীকে নিয়ে অভিযোগ, তাঁর নাম মো. ইউসুফ আলী।

অর্থের বিনিময়ে আপসের অভিযোগ

এর আগে, গত ৩০ জুন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তাহলে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট ও আইনজীবীর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে।’

এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেয়নি, যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে।’

এ পর্যায়ে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীকে ডাকেন। প্রথমে ড. ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন? তখন আইনজীবী উত্তরে বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন?’

এরপর আদালত শ্রমিকেরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়।

আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী।

আইনজীবীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

এদিকে গত ৩ জুলাই আইনজীবী ইউসুফ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়। ইউসুফ আলী নিজে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী জানান, সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তার ৬টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

এসময় ১২ কোটি টাকায় সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অসত্য।’

ইউসুফ আলী বলেন, ‘১২ কোটি টাকার কথা যে বলা হচ্ছে, তা টোটালি একটি ইমাজিনারি ফিগার। তবে আমি বড় অঙ্কের ফি পেয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা বড় অঙ্কের টাকা পেয়েছেন, আমাকে বড় অঙ্কের ফি দিয়েছেন।’

তবে ফি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্টদের মধ্যে যারা তিন কোটি বা তার বেশি পেয়েছেন, তারা নিজেরা ঠিক করেছিলেন ১৫-২০ লাখ টাকা করে দেবেন। আমার ১০০ জন ক্লায়েন্ট তিন কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন। এটা থেকে আপনারা ধারণা করতে পারেন আমি কত টাকা পেয়েছি। ক্লায়েন্টরা আমাকে হাসি মুখে ফি দিয়েছেন। তারা কারো কাছে অভিযোগ করেননি।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়।