প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় এসিড নিক্ষেপ, আসামীর ১০ বছর কারাদন্ড
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় এসিড নিক্ষেপ, আসামীর ১০ বছর কারাদন্ড

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দশম শ্রেণির ছাত্রী সহ ৩ জন শিক্ষার্থীকে এসিড নিক্ষেপের মামলায় একজন আসামীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। দন্ডিত আসামীকে একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

ঘটনার ২৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দন্ডিত আসামী হলেন- কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আকবর আহামদের পুত্র আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা।

বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, দন্ডিত আসামী আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা বিচারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়ার মতো দোষী সাব্যস্ত হলেও তার পরিবারে ছোট ও নাবালক শিশু সন্তান থাকায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা বিচারক সমীচীন মনে করেননি।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১৯৯৫ সালের ২৮ জুন সকাল ৭ টার দিকে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বদরখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মোহাম্মদ আলমের কন্যা হাসিনা বেগম, একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র মোস্তাক আহমদ ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আজিজুল হককে লক্ষ্য করে দন্ডিত আসামী আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা সহ আরো ৪ জন মিলে ২ বোতল এসিড নিক্ষেপ করে। এতে হাসিনা বেগম, মোস্তাক আহমদ ও আজিজুল হকের শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়।

এসিডে ঝলসে যাওয়া ৩ জন পরস্পর চাচাতো ভাই বোন এবং একই বাড়িতে পড়াশোনা করতো। হাসিনা বেগম দন্ডিত আসামী আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা’র দেওয়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় হাসিনা বেগমের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেওয়ার জন্য আসামি আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা এসিড নিক্ষেপ করে।

এ ঘটনায় হাসিনা বেগম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৪৮/৩২৬(ক)/১০৯ ধারায় আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা সহ ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার অন্যান্য আসামরীরা হলেন- আবুল কালাম প্রকাশ বাদশা’র তিন ভাই শাহাবুদ্দীন, নুর কালাম, কবির আহমদ এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ মদনের পুত্র ইউনুস মিয়া। যার চকরিয়া থানা মামলা নম্বর ০৭/১৯৯৫ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৪০/১৯৯৫ ইংরেজি (চকরিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৬০/২০০৩ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলাটি বিচারের জন্য ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে জেরা, আলামত প্রদর্শন, মেডিকেল সনদ পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক ইত্যাদি সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মামলার মূল আসামী আবুল কালাম প্রকাশ বাদশাকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩২৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাজা প্রদান করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে মামলার অবশিষ্ট ৪ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।