কারাদণ্ডের বিকল্প হিসেবে প্রবেশন ব্যবস্থা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম পলাশ

কারাদণ্ডের বিকল্প হিসেবে প্রবেশন ব্যবস্থা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মোঃ সাইফুল ইসলাম পলাশ : অপরাধী অপরাধ করলে কারাগারে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলেও কারাগারে যাবে না, বরং নিজ বাড়িতে থেকেই সংশোধনের সুযোগ পাবে, সমাজের নিজ পরিমণ্ডলে তার মুক্ত জীবন-জীবিকা অব্যাহত থাকবে – এটা কীভাবে সম্ভব!

বিশ্বাসযোগ্য না হলেও আমাদের দেশে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আইনানুগভাবেই অপরাধীদের প্রবেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কারাগারে না পাঠিয়েও পারিবারিক পরিবেশে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে। কেননা সাজা প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য সংশোধনমূলক (Reformatory); প্রতিহিংসামূলক (Retributory) নয়। সংশোধনমূলক এই ধারণা থেকে বাংলাদেশে কারাদণ্ডের বিকল্প হিসেবে প্রবেশন সংক্রান্ত বয়স্ক ও শিশুদের জন্য পৃথক পৃথক আইন করা হয়েছে।

প্রবেশন, কমিউনিটিতে সাজা ভোগ (Community Sentencing), বিকল্পপন্থা (Diversion), কনডিসনাল ডিসচার্জ, বাজেয়াপ্তকরণ, স্ট্যাটাস পেনাল্টিস, ভিকটিম ক্ষতিপূরণের আদেশ, জরিমানা, প্যারোল, ফারল, ওয়ার্ক রিলিজ ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো কারাদণ্ডের বিকল্প। এগুলোর মধ্যে প্রবেশন ব্যবস্থা অপরাধীদের সংশোধনের একটি আধুনিক পদ্ধতি। এটি হচ্ছে অপরাধীর বিশৃঙ্খল আচরণ সংশোধনের এমন একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্মপদ্ধতি যেখানে দণ্ডিত কোন ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার নিজ সমাজে জীবনযাপনের সুযোগ দেয়।

আমাদের দেশে লঘু অপরাধ, প্রথম অপরাধী এবং আইনের সংস্পর্শে আসা বা আইনের সাথে সংঘর্ষে জড়িত শিশুদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে পারিবারিক পরিবেশে রেখে সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করে তোলার লক্ষ্যে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রবেশন সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় আদালতকে সহায়তা করার জন্য এবং অপরাধীকে দেয়া শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসারদেরকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৪ জেলায় ৬৪ টি এবং ০৬ টি বিভাগীয় শহরে ০৬ টি মোট ৭০ টি প্রবেশন কার্যালয়ের মাধ্যমে এই সেবা পরিচালিত হচ্ছে।

কোন কোন মামলায় প্রবেশন দেয়া যাবে তা শিশু, নারী ও পুরুষ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন ও পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অপরাধের প্রকৃতি যেমনই হোক না কেন শিশু আইন, ২০১৩ এর বিধানানুযায়ী সকল শিশুই প্রবেশন পেতে অধিকারী। অন্যদিকে, দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর ৫ ধারানুসারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ ব্যতীত অন্য সকল অপরাধে একজন নারীর প্রবেশন মঞ্জুর করা যেতে পারে। তবে পুরুষ বয়স্ক আসামীদের প্রবেশন দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। একই ধারানুসারে পুরুষ বয়স্ক আসামীদের প্রবেশন দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন দেয়া যাবে না।

উক্ত ধারানুসারে আদালত যদি পুরুষ আসামীদের দণ্ডবিধির (১৮৬০ সনের ৪৫ নম্বর আইন) ষষ্ঠ বা সপ্তম অধ্যায় অথবা দণ্ডবিধির ২১৬ এ, ৩২৮, ৩৮২, ৩৮৬, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৭, ৩৯৮, ৩৯৯, ৪০১, ৪০২, ৪৫৫, ৪৫৮ ধারার অপরাধ অথবা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধ ছাড়া অন্য কোন অপরাধে দণ্ডিত করেন তাহলে আদালত উপযুক্ত বিবেচনা করলে তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রদানের পরিবর্তে লিখিতভাবে কারণ লিপিবদ্ধ করে ন্যূনতম এক বছর এবং অনধিক তিন বছরের জন্য প্রবেশনাদেশ দিতে পারেন। কতদিনের জন্য প্রবেশনে থাকতে হবে তা বিচারকের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা (Discretionary Power) যা প্রতিটি মামলার বিশেষ পরিস্থিতির নিরিখে ভিন্ন হতে পারে।

এছাড়া এই আইনের ৪ ধারায় আরো দুধরনের সংশোধনমূলক পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। ১) আদালত কোন নতুন অপরাধীকে কারাগারে না পাঠিয়ে, এমনকি প্রবেশনে না দিয়েও শুধু তিরস্কার (Admonition) করে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন; এবং ২) এরূপ নতুন অপরাধীদের আদালত উপযুক্ত মনে করলে শর্তসাপেক্ষে বন্ড নিয়ে অব্যাহতি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, প্রাক-পরিচয় বা শারীরিক বা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরণ বা অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা, লাঘবকারী পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনা করে যদি মনে করেন তার উপর শাস্তি আরোপ অযৌক্তিক এবং প্রবেশনাদেশ প্রদানও যথাযথ নয়, তাহলে ঐ কোর্ট লিখিতভাবে তার কারণ লিপিবদ্ধ করে যথোপযুক্ত উপদেশ বা সতর্ক করে অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে পারেন। তবে এরূপ আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে দুইটি শর্ত পূরণ আবশ্যক। ১) অপরাধীকে দু’বছরের অনধিক কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হতে হবে; এবং ২) অপরাধীকে পূর্বে কোন মামলায় দণ্ডিত হওয়া যাবে না।

একটি প্রবেশনে কি কি শর্ত থাকবে তা নির্ভর করে মামলার প্রকৃতি, অপরাধের ধরণ, অপরাধীর পেশা ও বৈশিষ্ট্য, অপরাধীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তার আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। এই শর্তগুলো নির্ধারণ করা বিচারকের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা (Discretionary Power) যা প্রতিটি মামলার বিশেষ পরিস্থিতির নিরিখে ভিন্ন হতে পারে। যেমন: ভবিষ্যতে অপরাধ করবে না বলে অপরাধীকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া, প্রবেশনারের সাথে বসবাসরত বৃদ্ধা মাতার প্রতি যত্নশীল হওয়া, আইন অনুযায়ী বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে না দেয়া, আসামীকে ছয় মাস পর পর ডোপ টেস্ট দেয়া, পরিবেশের উপর দায়িত্বশীল হয়ে একাধিক বনজ ও ফলদ বৃক্ষরোপণ করা, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্ম ও নৈতিকতা সংক্রান্ত একাধিক বই পড়া, প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষনার্থী হিসেবে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। এই শর্ত কতটি হবে তার কোন ধরা বাধা নিয়ম না থাকলেও প্রবেশনের ক্ষেত্রে এমন শর্ত যেন আরোপ করা না হয় যা অপরাধী বিশেষের পক্ষে পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। টোকিও রুলস (The Tokyo Rules) অনুসারে অপরাধীকে দেয়া শর্তগুলো যেন বাস্তবসম্মত, সংক্ষিপ্ত এবং তুলনামূলক কম হয়। তবে এই শর্তগুলো পালনের ব্যর্থতায় তার প্রতি আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতে পারেন, শুনানীর সুযোগ দিয়ে মূল অপরাধের জন্য স্থগিত হওয়া দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন বা অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন।

প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ অনুসারে বিশেষ আইনের ক্ষেত্রেও প্রবেশন প্রয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে অপরাধটি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধ কিনা তাই মূখ্য বিষয়। সম্প্রতি Md. Moti Matbor Vs The State মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট অভিমত দেন যে, ১৯৬০ সালের অধ্যাদেশ অনুসারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন, ১৯৯০ এর অধীনে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির প্রবেশন মঞ্জুর করতে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে নুর মোহাম্মদ বনাম সরকার এবং অন্যান্য মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ অভিমত দেন যে, কোন কোন বিশেষ আইনের অপরাধের ক্ষেত্রেও “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০” প্রয়োগ করা যাবে। এই আইন অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ, সব দায়রা ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রবেশন দিতে বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো প্রবেশন দিতে পারবেন। এই মামলায় আপীল বিভাগ আরো অভিমত দেন যে, দায়রা আদালত হিসেবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল এই আইনের বিধান প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়া আপিল বা রিভিশন আদালতেরও প্রবেশন আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের এই নজিরগুলোর প্রেক্ষিতে প্রবেশন প্রয়োগের ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হয়েছে।

প্রবেশন মঞ্জুর করা আদালতের একটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হলেও প্রবেশনযোগ্য কোন মামলায় কোন ব্যক্তি দোষ স্বীকার করে সরাসরি আদালতে প্রবেশনে যাবার আবেদন করতে পারেন। সাক্ষ্য প্রমাণে বা দোষ স্বীকারের প্রেক্ষিতে দোষী সাব্যস্ত হবার আদালত যদি উপযুক্ত মনে করলে প্রবেশন অফিসারকে অপরাধীর চরিত্র, প্রাক বংশ পরিচয়, পারিবারিক পারিপার্শ্বিক ও তথ্যাদি বা অবস্থাদি তদন্ত করে একটি প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন (Pre-sentence Report) দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারেন। প্রবেশন আইন ও বিধিমালায় এ সম্পর্কে কিছু বলা না থাকলেও প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। টোকিও রুলসে একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ আছে। রুল ৭ এ বলা হয়েছে যে, এই প্রতিবেদনে অপরাধী তথ্যসহ তার সাজা প্রক্রিয়ায় প্রাসঙ্গিক সুপারিশমালাও অন্তর্ভূক্ত করবে। প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর ৫ ধারা অনুসারে আদালত এই ধারা অনুসারে প্রবেশনাদেশ দেবেন না যতক্ষণ না আদালতের সন্তুষ্টি আসে যে, কোর্টের স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে অপরাধী বা তার একজন জামিনদারের মধ্যে নির্দিষ্ট বাসস্থান বা নিয়মিত জীবিকা আছে এবং প্রবেশনের মুচলেকার সময়কালে সেটি বহাল থাকবে। তাছাড়া শর্তাধীন অব্যাহতির আদেশ দেয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে অপরাধীকে পূর্বে কোন মামলায় দণ্ডিত হওয়া যাবে না। একজন বিচারকের পক্ষে অপরাধীর বর্তমান ঠিকানা, পেশা ও পূর্ব দণ্ড সম্পর্কে স্থানীয় অনুসন্ধান ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। প্রবেশন অফিসারের রিপোর্টের মাধ্যমেই জানা যায় অপরাধী আদৌ সংশোধনযোগ্য কিনা এবং তাকে পুনর্বাসন করা যাবে কিনা। State Vs The Metropolitan Police Commissioner মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট শিশুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় সকল বাস্তব দিক নির্ণয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রবেশন অফিসারের প্রতিবেদনের (সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন) উপর নির্ভর করতে গুরুত্বারোপ করেছেন। একইভাবে সম্প্রতি Md. Moti Matbor Vs The State মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট প্রবেশন আদেশ দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রবেশন অফিসারের নিকট হতে একটি প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

এরূপ অনুসন্ধানে প্রবেশন অফিসার যদি বুঝতে পারেন যে, অপরাধীর প্রবেশনে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে তা হলে তিনি তাকে প্রবেশনের সুপারিশ করেন। আদালত তখন উক্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন। প্রবেশন অফিসার সুপারিশ না করলে কিংবা প্রবেশনে যাবার পর প্রবেশনের শর্তগুলো লঙ্ঘন করলে তাকে আইন নির্ধারিত সাজা ভোগের জন্য কারাগারে যেতে হয়। আদালত মামলার কাগজপত্র ও সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে স্ব-উদ্যোগেও (Suo moto) প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন এর প্রয়োজন হয় না। তবে এরূপ ক্ষেত্রে অর্থাৎ প্রবেশন অফিসারের অনুপস্থিতিতে যখন কোন আদালত প্রবেশনাদেশ মঞ্জুর করা হয় তখন আদালত কর্তৃক নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হয়ে অপরাধীকে গ্রহণ করার জন্য প্রবেশন অফিসারকে নোটিশ দিতে হয়।

প্রবেশন ব্যবস্থা আসামীর সংশোধনের পাশাপাশি ভিকটিম সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে যেন তারা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়েও কাজ করে। দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর ৬ ধারায় ভিকটিমের খরচা ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়ে বলা আছে। তবে তা সংশ্লিষ্ট অপরাধের আরোপযোগ্য জরিমানার চেয়ে বেশি হবে না। আধুনিক প্রবেশন ব্যবস্থায় উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিকটিমের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। অপরাধী যদি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যায়। Commonwealth v. Sean P. Lally মামলায় অন্যান্য শর্তের মধ্যে ভিকটিম (অপরাধীর স্ত্রী) কে পুনরায় নির্যাতন না করার শর্তে প্রবেশন দেয়া হয়েছিল। প্রবেশনের এরূপ শর্ত ভিকটিমকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেয়। আবার Commonwealth v. Paul Macdonald মামলায় বিপরীতমূখী শর্ত আরোপ করা হয়। এরূপ শর্তও ভিকটিমকে সুরক্ষা দিতে পারে। যেমন: ভিকটিম থেকে দূরে থাকা এবং তার সাথে যোগাযোগ না রাখা । মামলা ভেদে এরূপ ভিন্ন ভিন্ন শর্ত ভিকটিমের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।

বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম রুলস ফর নন-কাস্টোডিয়াল মেজার’স (টোকিও রুলস) এ স্বাক্ষর করে, যেখানে দেশের বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশনসহ বিভিন্ন নন-কাস্টোডিয়াল বিষয়ে কাজ করার বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি হয়। কারা অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে বিচারাধীন বন্দিদের শতকরা ৫০.৩০% (২৭,৬৬৪ জন) ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের ৫২.৩০% (৯৫১১ জন) কেউই আগে কোনো অপরাধের সাথেই যুক্ত ছিলেন না অর্থাৎ তারা পেশাদার অপরাধী (Habitual offender) নয়। উক্ত রিপোর্ট অনুসারে, সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে মাত্র ৩৩.৫৯% (৬১০৯ জন) মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন অর্থাৎ বাকীরা বেশিরভাগই গুরুতর অপরাধের সাথে যুক্ত নয়। লঘু দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী এবং প্রথম অপরাধকারীর শাস্তি হিসেবে কারাগারে প্রেরণের কারণে দাগী অপরাধীদের সাহচর্যে তাদের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে কারাদণ্ডাদেশ এর প্রতি অতি নির্ভরশীলতার কারণে দেশের কারাগারসমূহে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এসব লঘু দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন ও কনডিসনাল ডিসচার্জ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সংশোধন ও পুনর্বাসন করে সমাজের মূল স্রোতে আনা যায়।

 

প্রবেশন ব্যবস্থার অন্যতম সুবিধা হচ্ছে অপরাধী জেল জীবনের কলঙ্ক (stigma of jail life) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামাজিক পরিমণ্ডলে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ লাভ করে। তার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে বিধায় তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা নিজেই মেটাতে সক্ষম হয়। আবার অপরাধীকে দেয়া শর্তের মাঝে যদি যদি কোন আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয় থাকে তাহলে সে তা পরিশোধ করার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রবেশনাধীন ব্যক্তি রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করলে একটি মামলা বাড়তো। যদিও প্রবেশনের বিরুদ্ধে তার আপীল করার সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি প্রবেশনে থাকার কারণে অর্থাৎ আপীল না করার কারণে আপীল আদালত চাপমুক্ত থাকতে পারছে। ফলে আপীল আদালতগুলো মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের মামলাগলোতে অধিক মনোনিবেশ করতে পারবে। এভাবে আপীলের পরিবর্তে প্রবেশনে মুক্তি মামলাজট কমাতে সহায়ক। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে একজন অপরাধী সফলভাবে প্রবেশনকাল সমাপ্ত করে মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি পেলে প্রচলিত কোন আইনে যেখানে কোন অপরাধীর ‘দণ্ডিত’ হওয়াকে অনুপযুক্ততা বা প্রতিবন্ধকতা বলে গণ্য করা হয়, সেটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। শুধু তাই নয় অপরাধী সংশোধনের পাশাপাশি কারা ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচন করা যায়। পাকিস্তানি লেখক Anees Jillani একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন যে, পাকিস্তান বর্তমানে প্রতি বছর কারাগারে ৮০০ মিলিয়ন রুপি ব্যয় করছে। যদি প্রবেশন ও প্যারোল পদ্ধতি গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে প্রতি বছরে খরচ প্রায় ৭০ মিলিয়ন রুপি কমে যেতে পারে।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট গত ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখে প্রবেশন আইনের বিধান প্রতিপালন সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এটি অত্যন্ত আশাপ্রদ যে, এই সার্কুলারের পর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশনের চর্চা তুলনামূলক বেড়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গত ২০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০০১-০২ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত প্রবেশনে মুক্তি/জামিনের সংখ্যা মোট ৮৬৯৮ জন। সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত প্রবেশনে মুক্তি/জামিনের সংখ্যা মোট ২২৭৮ জন। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের সার্কুলারে পর গত ২০১৯-২০ হতে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাকালে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকা সত্বেও প্রবেশন সুবিধা পেয়েছেন ২৩৫৫ জন অর্থাৎ দিন দিন এই সুবিধা বাড়ছে।

 

প্রবেশন সার্ভিস এদেশে গত ৬০ বছরে দৃশ্যমান হয়নি কেন? নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। অধিকাংশ আইনজীবী, প্রসিকিউটর এবং বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ আসামীকে প্রবেশনের সুযোগ প্রদান সম্পর্কে অবহিত নন। যারা বিষয়টি জানেন তাদের মধ্যেও এটিও প্রয়োগে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। রয়েছে প্রবেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব। আরেকটি বড় অসুবিধা হচ্ছে আমাদের দেশে নারী প্রবেশন কর্মকর্তা খুবই কম। নারীদের জন্য নারী প্রবেশন কর্মকর্তা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকায় নারীরা তুলনামূলক কম সুবিধা পাচ্ছে। প্রবেশন কার্যালয়ে পর্যাপ্ত জনবল ও লজিস্টিকস নেই। মাত্র একজন অফিসার এবং একজন অফিস সহায়ক দিয়ে এই কার্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। প্রবেশন অফিসারকে প্রবেশনারকে তত্ত্বাবধান করা ছাড়াও নানাবিধ কার্য সম্পাদন করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভিন্ন পদেরও দায়িত্ব পালন করতে হয়। অধিকাংশ প্রবেশন কার্যালয় জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে অবস্থিত। ফলে তারা দ্রুততম সময়ে আদালত সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না। পুনর্বাসন প্রবেশন ব্যবস্থার অন্যতম অংশ হলেও অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিতে বিচার বিভাগের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে পুনর্বাসনমূলক কোন কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারকগণ অবহিত হতে পারেন না।

প্রবেশন সার্ভিসকে এগিয়ে নিতে হলে নিম্নরূপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে –

(১) দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর ৬ ধারা সংশোধন করে ক্ষতিপূরণ প্রদান আরোপযোগ্য জরিমানার চেয়ে বেশি হবে না মর্মে সীমাবদ্ধ না করে অপরাধী ও ভিকটিমের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অপরাধের ধরণ, ক্ষতির পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনায় আদালত কর্তৃক যৌক্তিক পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয় অর্ন্তভূক্ত করা যেতে পারে।

(২) আদালত কর্তৃক স্ব-উদ্যোগে প্রবেশন মঞ্জুর করা এবং প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রবেশন মঞ্জুর করার পদ্ধতি সম্পর্কে আইন ও বিধিমালায় কোথাও সুস্পষ্টতা নেই। এর প্রয়োগ ও পদ্ধতি আইন ও বিধিমালায় সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

(৩) দণ্ডবিধির ৫৩ ধারানুসারে জরিমানা ছাড়া কারাদণ্ডাদেশের বিকল্প গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। তাই উক্ত ধারা সংশোধন করে প্রবেশন, কমিউনিটিতে সাজা ভোগ, বিকল্পপন্থা, কনডিসনাল ডিসচার্জ, বাজেয়াপ্তকরণ, স্ট্যাটাস পেনাল্টিস, ভিকটিম ক্ষতিপূরণের আদেশ ইত্যাদি নন- কাস্টডিয়াল পদ্ধতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

(৪) আপোষযোগ্য মামলায় অপরাধী প্রবেশনে গিয়ে প্রবেশন অফিসার বা তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতায় আপোষ মীমাংসা করতে পারে। ভিকটিম ও অপরাধী যেন পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে পারে কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে পারে সেজন্য প্রবেশন আইনে রেস্টোরেটিভ জাস্টিস পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।

(৫) প্রবেশন কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য পর্যাপ্ত মানবসম্পদ এবং লজিস্টিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রবেশন কার্যালয়ে সরকারী বা বেসরকারীভাবে আইন, সমাজ বিজ্ঞান, সমাজকর্ম, মনোবিজ্ঞান, পুলিশ সাইন্স ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সদ্য গ্রাজুয়েটদের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ইন্টার্ন বা ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

(৬) স্থানীয়ভাবে প্রবেশনারকে তদারকি করতে এবং প্রবেশন অফিসারদের সহযোগিতা করে শিক্ষিত, স্বচ্ছল এবং সমাজসেবী লোকদের ভেতর থেকে ভলান্টারি প্রবেশন অফিসার (ভিপিও) বা স্বেচ্ছাসেবী প্রবেশন অফিসার নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রবেশনে এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা রয়েছে।

(৭) বর্তমানে প্রবেশন সার্ভিসের জন্য পৃথক কোন বাজেট বরাদ্দ নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় যে বাজেট রয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। এজন্য প্রবেশন সার্ভিসের পৃথক ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।

(৮) প্রবেশনের সুফল পেতে হলে বিচারক, প্রবেশন কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার, কারা কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

(৯) প্রবেশন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে। এ জন্য জাতীয় প্রবেশন/সংশোধন সংস্থা গঠন পূর্বক জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটিগুলোতে সরকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের রাখতে হবে।

(১০) সাজাপ্রাপ্ত মহিলা কয়েদিরাও যাতে কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন ২০০৬ এর অধীনে সুবিধা পায় সে জন্য প্রতি ৩ (তিন) মাস অন্তর অন্তর কারাগারে প্রবেশন অফিসার বা অন্য কোন প্যারালিগ্যাল সংস্থার মাধ্যমে জরীপ করা উচিৎ।

(১১) প্রবেশন সেবাকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। এই সেবায় ভিকটিম, অভিযোগকারী এবং অপরাধীরা যাতে মামলার প্রত্যেকটি কার্যক্রম ও তারিখ সম্পর্কে এস.এম.এস এর মাধ্যমে জানতে পারে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রবেশনাধীন অপরাধীর গতিবিধি এবং অবস্থান জানার জন্য ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

(১২) সমাজসেবা বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রবেশন অফিসারদের বর্তমান কার্যালয় সরিয়ে নিয়ে আদালত ভবনে বা ভবন সংলগ্ন নিকটবর্তী স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।

(১৩) শিশু, ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধীদের ন্যূনতম প্রবেশনকাল কমানো উচিৎ। এরূপ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রবেশনকাল ০৬ মাস করা সমীচীন।

(১৪) প্রবেশনের সুফল পেতে হলে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে পুনর্গঠন করতে হবে। জেলা ও দায়রা জজকে সভাপতি করে শিশু আদালতের বিচারক এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।

(১৫) প্রবেশন সেবাকে আরো সহজীকরণ করতে হবে। সাজা প্রদানের পরেও একই বৈঠকে আপীলের শর্তে জামিনের দরখাস্তের মত আইনজীবী বা প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে প্রবেশনের দরখাস্ত দাখিলের বিধান করতে হবে।

(১৬) প্রবেশন অফিসারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রবেশনারদের জন্য পৃথক পৃথক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।

প্রবেশন ব্যবস্থা বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধী সংশোধনের আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ অপরাধীই অভ্যাসগত অপরাধী নয়। বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং বঞ্চনার শিকার হয়ে প্রথমবারের মত অপরাধ করে ফেলে। এরূপ প্রেক্ষাপটে প্রবেশনসহ কারাদণ্ডের বিকল্প পদ্ধতিগুলোর পরিকল্পিত ব্যবহার কারাগারের বন্দিদের চাপ কমানোর পাশাপাশি অপরাধীর অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করে এবং দ্বিতীয় সুযোগে অপরাধীদের সংশোধন করে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তুলে। তাই প্রবেশন সার্ভিসের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করলে প্রবেশন ব্যবস্থার আমূল এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং দেশে অপরাধপ্রবণতার হারও কমবে।

লেখক: মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ, বিচারক (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), প্রাবন্ধিক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা।

BIBLIOGRAPHY

Books and Journals

১. ইসলাম, ড. মোঃ নুরুল, সংশোধন ও সংশোধনমূলক সেবা, তাসমিয়া পাবলিকেন্স, ২০১৬
২. ইসলাম, মোঃ সাইফুল, প্রবেশন ও প্যারোল আইন – আইন, তত্ত্ব ও প্রয়োগ পদ্ধতি, ২০২১
৩. রহমান, গাজী শামছুর, অপরাধবিদ্যা, খোশরোজ কিতাব মহল, ২০১৬
৪. Anees Jillani, Cries Unheard: Juvenile Justice in Pakistan, SPARC (Society for Protection of the Rights of Child), 1999
৫. N.V. Paranjape, Criminology and Penology, 3rd edition 2000 & 12th edition, 2007.
৬. Development and use of the Probation System in Bangladesh, Bangladesh Legal Aid and Services Trust (BLAST) and Penal Reform International (PRI), 2013.
৭. Jon F. Klaus, Handbook for Probation Services, (UNICRI & Commonwealth Secretariat: 1998)
৮. Justice M Imman Ali, Towards a Justice Delivery System for Children in Bangladesh, (Dhaka: UNICEF, 2010)

Judicial Decisions

১. নুর মোহাম্মদ বনাম সরকার এবং অন্যান্য ১৫ এসসিওবি (২০২১) আপীল বিভাগ, ৭১
২. Abdul Khaleque vs Hazera Begum, 58 DLR 322 HCD
৩. Commonwealth v. Paul Macdonald; 435 Mass. 1005; 757 N.E.2d 725; 2001 Mass. LEXIS 641
৪. Commonwealth v. Sean P. Lally; 55 Mass. App. Ct. 601; 773 N.E.2d 985; 2002 Mass. App. LEXIS 1093
৫. Md. Moti Matbor Vs The State; 73 DLR 89
৬. State Vs The Metropolitan Police Commissioner, 60 DLR 660

Legislation

১. The Probation of Offenders Ordinance, 1960
২. The Probation of Offenders Rules, 1971.
৩. শিশু আইন, ২০১৩

Circular

১. সার্কুলার নং-জে-০১/২০১৯, তারিখ: ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা, (বিচার শাখা)

Report:

১. বাংলাদেশ সরকার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১
২. Prison Population Statistics, 2017, Vol- 01, February 2017, Department of Prisons, Bangladesh.