মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
দশ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গা হিজড়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। দন্ডিতকে একইসাথে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ২২ সেপ্টেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত তৃতীয় লিঙ্গ হচ্ছে-উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের ব্লক-এফ এর মোস্তফা কামাল ও জরিনা খাতুনের সন্তান শামসুল আলম প্রকাশ কাজল শাহা হিজড়া (২০)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২১ সালের ২৬ আগস্ট কক্সবাজার সদর উপজেলার লিংকরোডের মোড়ে হাফেজ আবদুল হক শপিং সেন্টারের সামনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা তৃতীয় লিঙ্গের শামসুল আলম প্রকাশ কাজল শাহা-কে আটক করে। পরে তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ তল্লাশি করে ১০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আলম বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণীর ১০(গ) ধারায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ৩৩/২০২১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৫১৩/২০২১ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর ৬৯৫/২০২২ ইংরেজি।
বিচার ও রায় :
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ পরিদর্শক এবং মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৩ জুন বিচারের জন্য মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলাটির ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন ও রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বৃহস্পতিবার মামলাটির রায়ের দিনে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন আসামী শামসুল আলম প্রকাশ কাজল শাহা হিজড়া-কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণীর ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। দন্ডিতকে একইসাথে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। ঘটনার মাত্র এক বছর ২৬ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় আসামী শামসুল আলম প্রকাশ কাজল শাহা হিজড়াকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়ার মতো আদালতে ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আসামীর বয়স কম, তৃতীয় লিঙ্গ, মাতা পিতা মিয়ানমারের নাগরিক হলেও আসামীর জন্ম বাংলাদেশে, ধৃত হওয়ার পর থেকে জেলে ছিলো, এসব বিষয় বিবেচনায় আসামীর সাজা শিথিল করে মৃত্যুদন্ডের স্থলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। সাজা শেষ হলে আসামীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।