ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট : ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন কক্সবাজার সদর থানার সাবেক ওসি এবং আইও
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার

আড়াইলক্ষ ইয়াবা পাচার : তদন্ত শেষ নাকরায় আইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের নির্দেশ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধারের মামলায় তদন্ত কাজ দীর্ঘ এক বছরেও শেষ করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফস্থ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তদন্তকাজে বিলম্ব, গাফেলতি, অবহেলা করে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) আদালতে দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত টেকনাফ এর বিজ্ঞ বিচারক আসাদ উদ্দিন মো: আসিফ এ আদেশ দেন।

কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরো জানান, ২০২১ সালের ২১ আগস্ট টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের হাবিরছড়া দক্ষিণ ঘাটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে নোঙর করা জনৈক হারুনের মালিকানাধীন একটি ইঞ্জিন চালিত বোট থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করে। অভিযান টের পেয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণীর ১০(গ), ২৬(১)/৪১ ধারায় টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ১১৭/২০২১ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর : ৭৩৯/২০২১ ইংরেজি (টেকনাফ)।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফস্থ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ-কে এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩১ ধারা মতে, ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে না পারায় আদালতে আবেদন করে পর পর ২ বার সময় বাড়িয়ে নেন। এরপরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তৃতীয় বারের মতো গত ২৪ আগস্ট আবারো সময় বাড়ানোর জন্য  আদালতে আবেদন করলে আদালত সময় বাড়ানোর আবেদন না মঞ্জুর করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার চরম ব্যর্থতার দায়ে তার বিরুদ্ধে চাকুরি বিধি অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবেনা, তৎমর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে বিজ্ঞ বিচারক ব্যাখ্যা তলব করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে দায়সারা গোছরের যেনতেন একটা ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আদালতের কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রদত্ত উক্ত ব্যাখ্যা আইনসঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত ও সন্তোষজনক না হওয়ায় আদালত তা গ্রহণ করেননি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা, অবহেলা, গাফিলতি ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কান্ড করেছেন বলে বিজ্ঞ বিচারক আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ মন্তব্য করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা অসৎ উদ্দেশ্যে পবিত্র জাতীয় সংসদে জনকল্যাণে পাশ করা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ন্যায় বিচারে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার অপরাধ করেছেন। মাদক মামলা তদন্তের আইনের নির্ধারিত সময় ৬০ কার্যদিবসের স্থলে এক বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারা তদন্তকারী কর্মকর্তার জন্য এটা চরম ব্যর্থতা। এ বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারক উচ্চ আদালতের বিভিন্ন নজীর, দৃষ্টান্ত ও অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেন। বিজ্ঞ বিচারক আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ তাঁর আদেশে আরো বলেন, বিচার কার্যক্রমে বিলম্ব সহ বিভিন্ন কারণে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়, এতে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস হ্রাস পায়। যা কখনো কাম্য নয়।

এ অবস্থায় বিজ্ঞ বিচারক আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। বিজ্ঞ বিচারকের এ আদেশের কপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালকের কাছে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।