ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী ছাড়া জামিন পেলেন আরও ৭ আসামি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী ছাড়া জামিন পেলেন আরও ৭ আসামি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের টানা কর্মবিরতির ফলে গতকাল বৃহস্পতিবারও সব আদালতে অচলাবস্থা দেখা গেছে। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে এদিন দুটি মামলায় সাতজন জামিন পেয়েছেন।

কোনো আইনজীবী ছাড়াই তাঁরা জামিন লাভ করেন। এর আগে গত বুধবারও (৮ ফেব্রুয়ারি) একই আদালতে দুটি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ ফারুক বেলা ১১টার দিকে আদালতের এজলাসে ওঠেন। এ সময় নেত্রকোনা থেকে আসা ছয় আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। বিচারক সবার জামিন মঞ্জুর করেন। যৌন নির্যাতনসংক্রান্ত আরও একটি মামলায় এক আসামিকে জামিন মঞ্জুর করেন তিনি।

ওই মামলার বাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা জুই আক্তার। গত বছরের ৪ আগস্ট স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ একই পরিবারের সাতজনের বিরুদ্ধে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন। আসামিরা সবাই নেত্রকোনার বাসিন্দা।

এই মামলার প্রধান আসামি (বাদীর স্বামী) পলাতক রয়েছেন। অন্য আসামিরা বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত হয়ে কোনো আইনজীবী ছাড়াই জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।

একই আদালতে যৌন নির্যাতন মামলার এক আসামির জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। ওই আসামি গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে জেলহাজতে আটক ছিলেন। মামলার আসামিকে পুলিশ বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালতে হাজির করলে আদালত কোনো আইনজীবী ছাড়াই জামিন মঞ্জুর করেন।

এ প্রসঙ্গে বিচারকাজে জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামিনের যৌক্তিক কারণ থাকলে আইনজীবী বা বাদীর অনুপস্থিতিতেও আসামিকে জামিন দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে আইনজীবী ও বাদীর অনুপস্থিতিতে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা প্রসঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিচারক মোহাম্মদ ফারুক যা করছেন, তা ন্যায়বিচার পরিপন্থী। বাদীর কথা না শুনে তিনি এভাবে জামিন দিতে পারেন না।

আদালত সূত্রে জানা যায়, অচলাবস্থার কারণে ১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে ১ হাজার ৩৯৭টি মামলার তারিখ পিছিয়েছে।

কর্মবিরতির কারণে কোনো আইনজীবী আদালতে না গেলেও হাজতি আসামি, মামলার বাদী, বিবাদী ও সাক্ষী, জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে প্রতিদিনই সাত থেকে আটজন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে যাচ্ছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁরা নিজেরাই আদালতের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ শিশুসহ ১৯ জনকে এই আদালত জামিন দিয়েছেন। একই সময়ের মধ্যে ২০টি মামলার নিষ্পত্তি (অব্যাহতি) করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক। নতুন করে মামলা এসেছে চারটি।

জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (তথ্য) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ২৮ জন বিচারক রয়েছেন। এর মধ্যে পেশাগত কাজে (প্রশিক্ষণ) পাঁচজন অনুপস্থিত রয়েছেন। বাকি বিচারকেরা আজও সকাল ১০টার পর থেকে তাঁদের এজলাসে ওঠেন। আইনজীবীরা আদালতে না থাকায় বিচারকেরা আদালত থেকে নেমে যান। তবে শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে বৃহস্পতিবার দুটি মামলায় সাতজন জামিন পেয়েছেন। এ সময় কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।