Advocate এর বাংলা বানান এবং কিছু বিভ্রান্তি
অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা

Advocate এর বাংলা বানান এবং কিছু বিভ্রান্তি

অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা: আমরা অনেকেই লিখি এডভোকেট,  আবার কেউ কেউ লিখি অ্যাডভোকেট। প্রকৃতপক্ষে  সঠিক বানানটি হলো ‘অ্যাডভোকেট’। কেন এটিকে সঠিক বানান হিসেবে বলা হয়েছে, তার কারণ হলো দুইটি।

প্রথমত, ইংরেজি A অক্ষরের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণের বেলায় দুটি রীতি অনুসরণ করতে হবে বলে বাংলা একাডেমি মনে করে। বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (২০০০ সালে প্রণিত)  অনুযায়ী বিদেশি শব্দে অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে ‘ এ ’ বা  ‘ে  কার’ ব্যবহৃত হবে। যেমন এন্ড, নেট, বেড, শেড ইত্যাদি। বিদেশি শব্দে বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারণে ‘ অ্যা ’ ব্যবহৃত হবে। যেমন অ্যাডভোকেট, অ্যাসিড, ক্যাসেট অ্যাকাডেমি ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, এ কথা সকলেই জানি যে, বাংলাদেশের সংবিধানের চেয়ে বড় বা শ্রেষ্ঠ কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। কারণ একটি রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে সে রাষ্ট্রের সংবিধান (অনুচ্ছেদ ৭ ও ২৬)। সংবিধানের ৯৫ নম্বর অনুচ্ছেদে  বানানটি  ‘ অ্যাডভোকেট ’ লেখা হয়েছে। তাই বিচার বিভাগের সকলকে এই বানানটি অনুসরণ করতে হয়।

কিন্ত এই অ্যাডভোকেট বানান নিয়ে সমস্যা হলো, ১৯৭৯  সাল থেকে আইন মন্ত্রণালয় সংবিধানের যত কপি ছাপিয়েছে তার সবগুলোতে ৯৫  অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত এই বানানটি সব সময় ভুল মুদ্রিত  হয়েছে।

তবে উল্লেখ্য যে, গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭২  থেকে  ১৯৭৫  সাল পর্যন্ত অন্ততপক্ষে  তিনবার সংবিধান ছাপা হয়েছে এবং এর প্রতিটি কপিতে  ৯৫ অনুচ্ছেদের এই বানানটি সঠিক ছিল অর্থাৎ তখন ‘অ্যাডভোকেট’ বানানটি সঠিকভাবে মুদ্রিত হয়েছে।

সেক্ষেত্রে  উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৭২  সালের আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মুদ্রিত সংবিধানের ৪৫ নম্বর দেখা যায়, যার স্মারক নম্বর বাঃসঃমুঃ—৭২ /৭৩-/৩৭২৫ এইচ। এমনকি  অ্যাডভোকেট বানানটি  ১৯৭৫  সালের মুদ্রিত কপিতেও সঠিক ছাপা হয়েছে। বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে ১৯৭৯ সালের মুদ্রিত  সংবিধান। আর ঠিক তখন থেকেই সংবিধানে ভুল বানান ছাপা হচ্ছে। সর্বশেষ সংবিধান ছাপা হয়েছে ২০১১ সালে, আর সেখানেও ঠিক এই ভুল বানান এর কোন সংশোধন হয়নি।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানে হাতে লেখা মূল পান্ডুলিপিতে  ‘অ্যাডভোকেট ‘ ছাপা হয়েছে (যাহা বাংলাদেশের  জাতীয় যাদুঘরে রক্ষিত মূল কপি)। আর এই হাতে লেখা সংবিধানই গণপরিষদ কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

ফলে, ওই কপিতে যে- বানান যেভাবে মুদ্রিত আছে পরবর্তীকালে ঠিক তা-ই বিন্দু-বিসর্গসহ হুবহু মূদ্রণ করা আইনত বাধ্যতামূলক। একমাত্র সার্বভৌম  সংসদের এখতিয়ার রয়েছে সংশোধনীর মাধ্যমে যে কোনো বানান পরিবর্তন করার, অন্য কারও নয়। এজন্যই সঠিক বানানটি হবে ‘অ্যাডভোকেট’।

লেখক : সহকারী সরকারি কৌঁসুলি; জজ কোর্ট, খুলনা।